চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ১৮৯ কোটি টাকায়, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৩৫.৩১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকারদের মতে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে তারল্য সংকটে ভুগছে এবং ব্যাংকগুলোর সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছে। নানা অনিয়মের কারণে তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ায় আমানত পেতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া, বিভিন্ন লুটেরাগোষ্ঠী খেলাপি ঋণের তথ্য চেপে রাখলেও এখন তা প্রকাশ পাচ্ছে, ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ শেষে এনবিএফআই খাতের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৭৫ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে খাতটিতে নতুন ঋণ বেড়েছে এক হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা।
এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে দুই হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা, যা বর্তমানে ২৭ হাজার ১৮৯ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল নয়। কিছু প্রতিষ্ঠান ভালো ব্যবসা করছে এবং তাদের ঋণ আদায়ও ভালো হচ্ছে। তবে ৩৫ শতাংশের বেশি ঋণ খেলাপি হওয়া ইতিবাচক নয়। তাই এই খাত পুনর্গঠন করতে হবে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, “সামগ্রিক অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে, এ কারণে ঋণ পরিশোধ কমে যাওয়ায় খেলাপি ঋণ বাড়ছে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “অর্থনৈতিক কার্যক্রমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রম দেখাতে পারেনি এবং নতুন নতুন পণ্য নিয়ে আসতে পারেনি।”
বর্তমানে দেশের সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে পিপলস লিজিং, বিআইএফসি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, এফএএস ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং, সিভিসি ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, আইআইডিএফসি, হজ ফাইন্যান্স, ফনিক্স ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, বে লিজিং, উত্তরা ফাইন্যান্স এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল।
এই পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে, যা দ্রুত সমাধানের প্রয়োজন।