বাংলাদেশের রাজনীতিতে তরুণদের প্রভাব আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্য নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং গণঅধিকার পরিষদ একীভূত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই দুই তরুণনির্ভর রাজনৈতিক শক্তি একত্রিত হলে আরও কয়েকটি দল তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে। তবে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় নাম, নেতৃত্ব আর সাংগঠনিক কাঠামো নিয়ে জটিলতা থেকেই যাচ্ছে। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেছেন। তিনি দেশে ফেরার পর শুরু হবে আনুষ্ঠানিক আলোচনা। এনসিপি সূত্র জানিয়েছে, আলাদা কোনো নতুন প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং একীভূত দলটি এনসিপি নামেই রাজনীতি করবে। এতে গণঅধিকার পরিষদকে এনসিপির পতাকার নিচে আনা হবে। একীভূত দলের প্রধান হিসেবে থাকবেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। আর নুরুল হক নুরকে রাখা হবে এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ পদে। গণঅধিকারের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা নতুন পরিচয়ে তাদের পদে বহাল থাকবেন। এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাজনৈতিক লিয়াজো প্রধান আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে এনসিপির রাজনৈতিক আদর্শের মিল আছে। দুটি দলই তারুণ্যের শক্তিকে ভিত্তি করে এগোচ্ছে। একীভূত হওয়ার আলোচনা সফল হলে তরুণদের প্রভাব রাজনীতিতে আরও বাড়বে।” এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ স্পষ্ট করে বলেন, “এনসিপির নাম পরিবর্তন হচ্ছে না। একাধিক দল একীভূত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তরুণরা ঐক্যবদ্ধ হলে রাজনীতিতে এক নতুন যুগের সূচনা হবে।” গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, “আমাদের দুই দলের নেতারাই ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে আলোচনা করছেন। জনগণের স্বার্থে আমরা একসঙ্গে পথচলার বিষয়ে প্রস্তুত। দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আমরা একসঙ্গে লড়াই করেছি, এবার সেটিকে সাংগঠনিক রূপ দেওয়ার সময় এসেছে।” দলটির দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামান মনে করেন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকেই নতুন রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের বীজ বপন হয়েছিল। “তরুণদের ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস বহুদিন ধরেই চলছে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জুলাই আন্দোলনের মূল অংশীজনদের ঐক্য অপরিহার্য।” গণঅধিকার পরিষদের যুব সংগঠন যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোরশেদ মামুন বলেন, “এ একীভূতকরণ সফল হলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি হবে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।” সার্বিকভাবে, এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের ঐক্যের চেষ্টা তরুণ নেতৃত্বকে রাজনীতিতে নতুন শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। তবে নাম, পদবিন্যাস ও রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে চলমান জটিলতা মিটিয়ে তারা কবে আনুষ্ঠানিকভাবে একীভূত হবে, সেটিই এখন সময়ের অপেক্ষা।