সম্প্রতি বিশ্ববাজারে আকরিক লোহার দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে, যা সরবরাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি চাহিদা কমে যাওয়া থেকে উদ্ভূত হয়েছে। চীনের দালিয়ান কমোডিটি এক্সচেঞ্জে মে মাসের আকরিক লোহার ফিউচারের দাম শূন্য দশমিক ৫১ শতাংশ পতিত হয়ে টনপ্রতি ৭৭৩ দশমিক ৫ ইউয়ানে নেমে আসে। একই সঙ্গে সিঙ্গাপুর এক্সচেঞ্জেও জানুয়ারির চুক্তির দাম শূন্য দশমিক ১ শতাংশ কমে ১০৩ দশমিক ৯৫ ডলারে পৌঁছেছে। চীনের বিভিন্ন বন্দরে আকরিক লোহার মজুত আগের সপ্তাহের তুলনায় ২ দশমিক ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১৪৮ দশমিক ৮ মিলিয়ন টনে দাঁড়িয়েছে। তবে ইস্পাত কারখানাগুলোতে কার্বন স্টিলের মজুত হ্রাস পেয়েছে; পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মিস্টিলের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচটি প্রধান কার্বন স্টিল পণ্যের মজুত ১৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন টনে নেমে যা চলতি বছরের জানুয়ারির শেষে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রাজিল থেকে উৎপাদন বাড়লেও চীনে ইস্পাতের চাহিদা কমে যাওয়ায় বাজারে চাপ তৈরি হয়েছে। এর পেছনে দীর্ঘস্থায়ী সম্পত্তি খাতের মন্দাই অন্যতম প্রধান কারণ। ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে এই খাত সংকটে পড়ে, বাড়ির দাম ও বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। চীন সরকার ইস্পাতের দাম স্থিতিশীল রাখতে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে নতুন লাইসেন্সিং ব্যবস্থা চালুর ঘোষণা দিলেও জাপানের আয়রন অ্যান্ড স্টিল ফেডারেশনের চেয়ারম্যান তাদাশি ইমাই এই ব্যবস্থাকে কার্যকর সমাধান হিসেবে দেখছেন না। পাশাপাশি, জাপান অভিযোগ করেছে যে, চীনা ইস্পাত কোম্পানিগুলো সরকারি ভর্তুকি পেয়ে অতিরিক্ত উৎপাদন ও কম দামে রপ্তানি বাড়াচ্ছে, যা বৈশ্বিক বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অন্য কাঁচামালেও দাম কমেছে; দালিয়ান এক্সচেঞ্জে কোকিং কয়লার দাম ৪ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং কোকের দাম ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। মিস্টিলের তথ্য মতে, সাম্প্রতিক নিলামে প্রায় ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ কোকিং কয়লার চালান ক্রেতা পাননি, যা চাহিদা কমার সুস্পষ্ট সংকেত। সাংহাই ফিউচার্স এক্সচেঞ্জেও অধিকাংশ ইস্পাত পণ্যের দাম কমেছে; রিবার ১ দশমিক ০২ শতাংশ, হট-রোল্ড কয়েল ০ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং স্টেইনলেস স্টিল ০ দশমিক ১২ শতাংশ পতিত হয়েছে। তবে ওয়্যার রডের দাম ২.৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিস্থিতি বিশ্ব ইস্পাত ও কাঁচামাল বাজারে সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্যহীনতার প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।