বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
৫ ঘণ্টা পর কড়াইল বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে জাতীয় নির্বাচন সফলভাবে আয়োজনের জন্য কমনওয়েলথের পূর্ণ সমর্থন চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকা ও আশপাশে ভূমিকম্পের তীব্রতা বাড়ছে, বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা! নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় বাতিল, ত্রয়োদশ সংশোধনী বৈধ ঘোষণা করলেন আপিল বিভাগ নির্বাচন উৎসবমুখর করতে সেনাবাহিনীর সহায়তা দরকার: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতার অবস্থান যাই হোক, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয় : ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হলো রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুনকে ভোটের পথে বাধা দিতে পারবে না কোনো অপশক্তি : আইজিপি কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট : জাতির উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা

“পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারিনি সাড়ে ২৩ বছর”

bornomalanews
  • Update Time : সোমবার, ৩১ মার্চ, ২০২৫
  • ১৭১ Time View

 

“সাড়ে তেইশ বছর ধরে এই চাকরি করছি। একটা ঈদও পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পারিনি। ঈদের দিনও ক্যাম্পাস পাহারা দিতে হয়। এখন আর বাড়ি থেকে কলও আসে না।” কথাগুলো বলছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক প্রহরী। তাঁর কণ্ঠে ছিল এক অদ্ভুত মিশ্রণ—দায়িত্বের গর্ব এবং পরিবারের প্রতি গভীর আকাঙ্ক্ষা।

বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন প্রহরীরা। তাদের কাজের মূল উদ্দেশ্য হলো নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বছরের পর বছর পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার রোল (চুক্তিভিত্তিক) এবং আউটসোর্সিংয়ের অনেকেই ২০-৩০ বছর ধরে এই চাকরিতে আছেন, কিন্তু ঈদে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পান না।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্যে ৮৮ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব এবং সাতজন আনসার সদস্য আউটসোর্সিংয়ে কাজ করছেন। মাস্টার রোলের মধ্যে চোক ভাতায় তিনজন আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৫ জন নিরাপত্তা প্রহরীর মধ্যে ঈদের ছুটি পেয়েছেন মাত্র ১৬ জন। অথচ আউটসোর্সিং ও মাস্টার রোলের ১৭ জন সদস্যের কেউ ঈদ উপলক্ষে কোনো ছুটি পাননি। তারা ৮৯ জন তিনটি শিফটে কাজ করেন—ভোর সাড়ে ৬টা থেকে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট, দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে রাত ১০টা এবং রাত সাড়ে ১০টা থেকে ভোর সাড়ে ৬টা পর্যন্ত।

চুক্তিভিত্তিক প্রহরীরা বছরের পর বছর কাজ করলেও তাদের চাকরির স্থায়িত্ব নেই। এক প্রহরী বললেন, “একটা চাকরির নিশ্চয়তা থাকলে অন্তত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে পারতাম। কিন্তু এখানে যে কোনো সময় চাকরি চলে যেতে পারে।” নিরাপত্তা কর্মীদের অনেকেই অভিযোগ করেন, নির্ধারিত কাজের বাইরে অতিরিক্ত কাজ করানো হয়, কিন্তু সেই অনুযায়ী পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না। “বেসিকের ওপর যদি আমাদের ওভারটাইম হিসাব করে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা আরও উৎসাহ পেতাম। মাসের শেষে হাতে তেমন কিছুই থাকে না,” বলেন একজন প্রহরী।

কোম্পানির মাধ্যমে আসা (আউটসোর্সিং) এক প্রহরী জানান, “আমি যে কোম্পানির মাধ্যমে এখানে কাজ করছি, তারা আমার কাজ থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকা নিয়েছিল। আমি জানতাম এটা স্থায়ী, কিন্তু এখন দেখি অস্থায়ী।” তিনি আরও বলেন, “সামনে নিয়োগের সময় যেন আমরা যারা আগে থেকে আছি, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।”

নিরাপত্তা প্রহরীর তদারকির দায়িত্বে থাকা জয়নাল বলেন, “এ বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কাছে আমানত। আমরা ছুটিতে চলে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জিনিসপত্র ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা চুরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটাতে মন চায় ঠিকই, কিন্তু আমাদের দায়িত্ব আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার জন্য এ সময়টায় আমরা দায়িত্বে থাকি।”

নিরাপত্তা শাখার তত্ত্বাবধায়ক আব্দুর রহমান জানান, ঈদের সময় ক্যাম্পাসে বিশেষ টহল ব্যবস্থা চালু থাকে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। “রাতের বেলায়ও বিশেষ নজরদারি চলে। কিন্তু নিরাপত্তা প্রহীরীর সংখ্যা কম। আরও ২০-২৫ জনকে নতুনভাবে যুক্ত করা হলে আমাদের জন্য সহজ হয়,” বলেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, “তাদের জন্য একটা ব্যবস্থা করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের থাকতে হয়। পরিবার থেকে দূরে থাকা আসলেই কষ্টের। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, তাদের জন্য ঈদের দিন ব্যবস্থা রাখতে। তারা যেন আনন্দে ঈদ করতে পারে।”

এই প্রহরীদের ত্যাগ, দায়িত্ব এবং স্বীকৃতির আকাঙ্ক্ষা যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, নিরাপত্তার পেছনে যে মানবিক গল্পগুলো লুকিয়ে আছে, সেগুলো কখনোই ভুলে যাওয়া উচিত নয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 bornomalanews24.com
themesba-lates1749691102