আগামী বছরের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপার কাজ শুরু করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সরকার নিম্নমানের কাগজে ছাপানো বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং নতুন কিছু শর্ত আরোপ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, প্রত্যেক ছাপাখানায় অত্যাধুনিক ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) বসানো বাধ্যতামূলক। এই সিসিটিভির নিয়ন্ত্রণ এনসিটিবিকে দিতে হবে, যাতে তারা ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করতে পারে। এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানান, গত ১৬ বছরে পাঠ্যবই ছাপানোর ক্ষেত্রে নিম্নমানের কাজের যে তথ্য উঠে এসেছে, তা উদ্বেগজনক। ২০২৩ সালে ২৬৯ কোটি টাকার অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে ২৫৫ কোটি টাকা লোপাটের পরিসংখ্যান জনমনে প্রশাসনিক তদারকির বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এবার ৪৬টি ছাপাখানা চিহ্নিত হয়েছে, যারা নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যবই ছাপিয়ে সরবরাহ করেছে। এনসিটিবি এবার সময়মতো পাঠ্যবই ছাপানো ও কাগজের মান ঠিক রাখতে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই তুলে দিতে দেরি হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি করেছে। এনসিটিবি আগামী বছরের জন্য পাঠ্যবই ছাপার কাজ আগেভাগেই শুরু করেছে এবং গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। জুনের মধ্যে সব দরপত্রের কাজ শেষ করে নভেম্বরের মধ্যে পাঠ্যবই ছাপিয়ে মাঠপর্যায়ে পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে এনসিটিবির নিয়মিত চেয়ারম্যান নেই এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী তিন মাসের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জানান, আগামী শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক স্তরে প্রায় ৭ কোটি বই কম ছাপা হবে, যার ফলে মোট বইয়ের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৩৩ কোটি। এছাড়া, ছাপাখানাগুলোর সক্ষমতার চেয়ে বেশি বই ছাপানোর কাজ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কোনো প্রেস একটি ওয়েব মেশিন নিয়ে দরপত্রে অংশ নিতে পারবে না; কমপক্ষে দুটি ওয়েব মেশিন থাকতে হবে এবং পেপার মিলের সঙ্গে চুক্তির কাগজ জমা দিতে হবে। সরকার প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে নবম-দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে পাঠ্যবই দেয়। ২০১০ সালে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হয়েছিল, তবে গত দুই-তিন বছর বিভিন্ন কারণে বই বিতরণে দেরি হয়েছে। এবার পাঠ্যবই ছাপানোর ক্ষেত্রে প্রাক্কলিত দরের তুলনায় গড়ে ২০ শতাংশ বেশি দরে প্রায় ৪০ শতাংশ বই ছাপানো হয়েছে, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী বছর প্রাক্কলিত দরের ১০ শতাংশের বেশি হলে রি-টেন্ডার দেওয়া হবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, “নিম্নমানের কাগজে কেউ যাতে পাঠ্যবই ছাড়াতে না পারে, সেজন্য এবার প্রত্যেক ছাপাখানায় সিসিটিভি থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।” এই পদক্ষেপগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত পাঠ্যবই নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।