প্রায় এক লাখ শিক্ষক ও কর্মচারী আজ দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। তাদের পেনশন, যা গত পাঁচ বছর ধরে ঝুলে আছে, কবে নাগাদ মুক্তি পাবে, তা নিয়ে রয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সম্প্রতি বলেছেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পেনশনের ৭-৮ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে ডিও লেটারও পাঠানো হয়েছে। ৩ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভা শেষে তিনি সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশ করেন। তবে, কে বা কিভাবে এই অর্থ লুটপাট করেছে, সে বিষয়ে তিনি স্পষ্ট কিছু বলেননি। এর আগে, রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে ড. মাহমুদ আরও জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য জমানো ৬ হাজার কোটি টাকা যে ব্যাংকে রাখা হয়েছিল, সেটি দেউলিয়া হয়ে যাওয়ায় শিক্ষকদের সঞ্চয়ের কোনো টাকা এখন আর নেই। শিক্ষক নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, “কারো টাকাই লোপাট হলো না, বেসরকারি শিক্ষকদের টাকা লোপাট হলো কেন?” তারা দাবি করেছেন, এই সংকটের সমাধান নির্ভর করছে এককালীন জরুরি বরাদ্দের ওপর, যা সরকারের পক্ষ থেকে এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। অবসর ও কল্যাণ-সুবিধা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিক্ষকদের এই অসহায়ত্ব দেখে তারাও কিছু করতে পারছেন না। অবসরপ্রাপ্ত ১০ জন শিক্ষক ইত্তেফাককে জানিয়েছেন, “শিক্ষার আলো ছড়িয়ে জীবনের প্রায় পুরোটা সময় পার করেছি। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে এখন দিন কাটছে নিদারুণ কষ্টে।” তারা অভিযোগ করেছেন, অবসরকালীন সুবিধা বুঝে নিতে গিয়ে পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বছরের পর বছর দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে তাদের। টাকা না পেয়ে চিকিৎসা করাতে পারছেন না, দারিদ্র্যের জালে আটকে পড়েছেন। জানা গেছে, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের অবসর ভাতা পাওয়ার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এর মধ্যে সাড়ে ৩৯ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের অর্থের জন্য অপেক্ষা করছেন। সবমিলিয়ে প্রায় ৮৩ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর আবেদন নিষ্পত্তি করতে অন্তত ৯ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। অবসর সুবিধার জন্য চাকরিকালীন তাদের মূল বেতনের ৬ শতাংশ টাকা মাসে কেটে রাখা হয়, এবং কল্যাণ সুবিধার জন্য কাটা হয় ৪ শতাংশ। অন্যদিকে, ২০২০ সালের এপ্রিলে অবসরে গেছেন কুড়িগ্রাম টেপারকুটি দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক গাজীউর রহমান। পাঁচ বছর পার হতে চললেও, তিনি এখনও অবসরভাতা ও প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা পাননি। একই বছরের অক্টোবরে অবসরে গেছেন শরীয়তপুর ডামুড্যা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কর্মচারী রাশিদা বেগম। তিনিও তার প্রাপ্য বুঝে পাননি। এদিকে, নওগাঁর পত্নীতলা থেকে এক বৃদ্ধ বাবা জানান, “তারিখের পর তারিখ, নথির পর নথি দিলেও ব্যাংক হিসাবের ব্যালেন্স শূন্য।” অনলাইনে আবেদন করার পর কেটেছে চার বছর, কিন্তু একটি টাকাও ছোয়ার ভাগ্য হয়নি। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা জানান, তাদের শেষ জীবন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে। চিকিৎসা, সন্তানের লেখাপড়া কিংবা মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা নেই। অনেকেই ধারদেনা করে চলতে বাধ্য হচ্ছেন। অবসরে যাওয়ার পর টাকা না পেয়ে মারা গেছেন অনেকে। শিক্ষকরা প্রতিদিন দেশের ৬৪টি জেলা থেকে অবসর ভাতার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ধরনা দিচ্ছেন। অনলাইনে আবেদন করার বিধান থাকলেও, অনেক শিক্ষকের আবেদনে নানা সমস্যা থাকে। ফলে তাদের অনেককেই ঢাকায় আসতে হয়, এবং এখানে এসে বিড়ম্বনার শিকার হন। ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময়ে বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু শুরু থেকেই এই অবসর সুবিধা বোর্ড চরম অবহেলিত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব এই দুই প্রতিষ্ঠানে পদাধিকারবলে চেয়ারম্যান হলেও, মূলত সচিবের নেতৃত্বে চলে। রাজধানীর পলাশী-নীলক্ষেত এলাকায় বাংলাদেশ শিক্ষা