জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে, দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়ে সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল রায় ঘোষণা করেন। প্যানেলের নেতৃত্বে ছিলেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার, অন্য সদস্যরা ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। রায় ঘোষণার সময় জনাকীর্ণ আদালতে নিহতদের পরিবারের সদস্যসহ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। ট্রাইব্যুনাল রায়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে; একটিতে আজীবন কারাদণ্ড এবং দুইটিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের দাবি ছিল, ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধের মাস্টারমাইন্ড ও সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা ছিলেন। এই মামলায় আসামি ছিলেন শেখ হাসিনা ছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। সাবেক আইজিপি মামুন একমাত্র গ্রেপ্তারকৃত আসামি এবং তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণকালে ৫৪ জন সাক্ষীর মধ্যে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী, আহত ব্যক্তি, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এ ছাড়াও শেখ হাসিনার টেলিফোন কথোপকথনের অডিও-ভিডিও, গণমাধ্যম প্রতিবেদন ও জব্দকৃত গুলির প্রমাণাদি বিচারিক কার্যক্রমে উপস্থাপিত হয়। ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয় ২০২৪ সালের আগস্টে এবং এর পরই এই মামলার বিচার শুরু হয়। ১০ জুলাই ২০২৪ তারিখে তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে গঠন করা হয়। মামলায় আনা অভিযোগের মধ্যে রয়েছে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান, হেলিকপ্টার ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের হত্যার নির্দেশ দেয়া, নির্দিষ্ট হত্যাকাণ্ডে প্ররোচনা ও ষড়যন্ত্র, এবং আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যাসহ বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ। রায়ের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উল্লাস প্রকাশ করে মিষ্টি বিতরণ করেন, যা এই রায়ের জনসাধারণের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন। এই রায় দেশের ইতিহাসে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ও আইনের শাসনের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।