জুলাই ঐক্য তাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা এবং সরকারের প্রতি দাবি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ চারটি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি টিচার্স লাউঞ্জে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তগুলো প্রকাশ করা হয়। নেতারা জানান, তাদের মূল লক্ষ্য হলো আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা এবং জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ধরে রেখে একটি গণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সংবাদ সম্মেলনে জুলাই ঐক্যের নেতারা বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ২ হাজার শহীদের রক্তের ওপর ভিত্তি করে আমরা আজকের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি।” তাদের দাবি, আওয়ামী লীগকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে। তারা আরও জানান, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র সরকারকে প্রস্তাব আকারে দেওয়া হবে এবং এর মাধ্যমে দেশের সব জুলাই চেতনা ধারণকারী সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। নেতারা উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সাম্প্রতিক সরকারি সিদ্ধান্তকে তারা আংশিক সাফল্য হিসেবে দেখছেন। তবে তারা মনে করেন, এটি যথেষ্ট নয়। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলসহ এর অঙ্গসংগঠন এবং সহযোগী দলগুলোকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসন, শিক্ষা এবং মিডিয়ায় ফ্যাসিবাদের দোসরদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা। অন্যথায়, তাদের তালিকা প্রকাশ করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতা জুলাই ঐক্যের আন্দোলন শুরু হয় গত বুধবার, যখন তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। পরবর্তী সময়ে শুক্রবার বিকেলে শাহবাগে তাদের অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। একইদিন যমুনার সমাবেশ থেকে ছাত্র-জনতা শাহবাগে যোগ দেয়। সেখানে জুলাই বিপ্লবের অন্যতম সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহসহ বহু নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। শনিবার রাতে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য’র সঙ্গে সমন্বয় করে তারা তাদের আন্দোলন আরও বিস্তৃত করে। নেতারা জানান, সোমবার সরকারের নির্ধারিত পরিপত্রের অপেক্ষায় রয়েছে তারা। এই পরিপত্রে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠন নিষিদ্ধ করার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত আসবে, তা তাদের পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করবে। জুলাই ঐক্যের দাবি ও প্রত্যাশা জুলাই ঐক্য স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা আওয়ামী লীগের শেকড় উপড়ে ফেলার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাবে। তাদের মতে, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রভাব এবং ফ্যাসিবাদের দোসরদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত তাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। তারা বলেন, “আমাদের দাবি পূরণ না হলে আমরা আরও বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।” এই সিদ্ধান্ত এবং আন্দোলন ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জুলাই ঐক্যের এই কর্মসূচি দেশের রাজনীতিতে নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করছে এই আন্দোলনের ভবিষ্যৎ এবং এর প্রভাব।