জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে নিয়েছে সরকার। টানা তিন দিন ধরে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার পর, গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম শিক্ষার্থীদের কাছে সরকারের সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কাকরাইলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন বাজেট বৃদ্ধি করা হবে এবং আবাসন সংকট নিরসনে দ্রুত অস্থায়ী নির্মাণকাজ শুরু হবে। এছাড়া, দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। উপাচার্য বলেন, “আমরা সব সময় শিক্ষার্থীদের স্বার্থ দেখি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছে সরকার। ইউজিসি একটি পরিবার হিসেবে সবাই মিলে এটার সমাধান করতে পারব।” তিনি শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন যে, তাদের সব দাবি বাস্তবায়নে কাজ চলছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পটভূমিতে ছিল তিনটি মূল দাবি, যার মধ্যে ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি চালু করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট কাটছাঁট না করা এবং দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন অন্তর্ভুক্ত ছিল। আন্দোলনকারীরা বুধবার দুপুরে ক্যাম্পাস থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে ‘লংমার্চ’ শুরু করেন। মিছিলটি বিভিন্ন স্থানে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হলেও তারা তাদের লক্ষ্য থেকে বিচলিত হননি। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করতে যমুনায় যান। সেখানে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে উপদেষ্টা আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনাদের অপকর্মের মাধ্যমে আপনারা পুলিশের অবস্থানকে ন্যায্যতা দিলেন।” এরপর আন্দোলনকারীরা রাতভর কাকরাইল মসজিদ মোড়ের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। পরবর্তী দিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদদীন ফেসবুক লাইভে এসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ দিতে আহ্বান জানান। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মোড়ে এসে অবস্থান করেন। দিনভর আন্দোলন চলতে থাকে এবং অবশেষে সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা আসে। যদিও অনেকে সরকারি লিখিত ঘোষণা না আসা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যান, তবে আন্দোলনের ফলস্বরূপ নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। এই আন্দোলন শুধু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বরং দেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন এবং সরকারের সদর্থক প্রতিক্রিয়া ভবিষ্যতে আরও উন্নত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করবে।