শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীর ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় মূল হোতা গ্রেফতার চট্টগ্রামের পটিয়ায় পুলিশের সঙ্গে এনসিপি ও ছাত্র আন্দোলনের সংঘর্ষ: উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ আবু সাঈদ হত্যা : ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল চীন সফর শেষে দেশে ফিরলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চীন সফর শেষে দেশে ফিরলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকার ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উদযাপনের জন্য জেলা পর্যায়ে বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করেছে এনবিআরে প্রবেশ ও বের হওয়া নিষিদ্ধ, আন্দোলনকারীদের অবস্থান প্রকাশ ইরানে যুদ্ধের পরিস্থিতিতে ২৫০ বাংলাদেশির দেশে ফেরার জন্য নিবন্ধন: সরকার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে হাসিনার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করলো ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়

রেমিট্যান্সে বদলে যাবে বাংলাদেশ হুন্ডি বন্ধ হলে

bornomalanews
  • Update Time : সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১৫১ Time View

দেশের ডলার সমস্যা সমাধানের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে প্রবাস আয় বা রেমিট্যান্স। তবে তার আগে ১০টি বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়লেও প্রবাস আয়ের শতভাগ ব্যাংকের মাধ্যমে আসছে না। তথ্য মতে, ব্যাংকিং চ্যানেলে বর্তমানে প্রতি ডলারের বিপরীতে ১২১ টাকা পাচ্ছেন প্রবাসীরা। আর খোলাবাজারে এই রেট সর্বোচ্চ ১২২ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর উদ্যোগে বর্তমানে হুন্ডিতে সুবিধা করতে পারছে না হুন্ডিচক্র। অফিশিয়াল রেট ও হুন্ডির রেট কাছাকাছি চলে আসায় প্রবাসীরা বর্তমানে ব্যাংক চ্যানেলে টাকা পাঠাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। ফলে হুন্ডি বন্ধ করা গেলে বর্তমানে বছরে আসা ২৫ বিলিয়ন ডলার দ্বিগুণ অর্থাৎ ৫০ বিলিয়ন করা সম্ভব।

বিগত সরকারের আমলে রেমিট্যান্স পাঠাতে সচেতনতা বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছিল প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বিদেশ থেকে দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে হুন্ডি কারবারিদের দৌরাত্ম্য প্রতিরোধে ১০টি প্রতিবন্ধকতার কথা বলা হয়। প্রতিবন্ধকতাগুলো হলো- বৈধ পথের তুলনায় অবৈধ পথে রেমিট্যান্স বিনিময় হারের ফারাক, প্রবাসী কর্মীর বৈধ কাগজপত্র না থাকা, প্রবাসে বাংলাদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা না থাকা বা পর্যাপ্ত শাখার অভাব। এ ছাড়া বাংলাদেশি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান না থাকা বা পর্যাপ্ত মানি এক্সচেঞ্জ পয়েন্ট না থাকা, রেমিট্যান্স প্রেরণে উচ্চ ফি বা সার্ভিস চার্জ এবং নির্ধারিত সীমা (সিলিং), হুন্ডি কারবারিদের দৌরাত্ম্য, অনেক ক্ষেত্রে প্রবাসীদের বা প্রবাসীদের নিকটাত্মীয়দের দেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকা, আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে রেমিট্যান্স প্রেরণে প্রতিবন্ধকতা, অননুমোদিত ব্যবসা বা কাজের আয় বৈধ পথে পাঠানোর সুযোগ না থাকা, বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণে সচেতনতা ও উৎসাহের অভাব।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈধ পথে প্রবাস আয় দেশে আনতে সব ধরনের প্রচেষ্টা কাজে লাগাতে হবে। বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোকে আরো তৎপর হতে হবে। এ কাজে কিছু দেশের মতো বিশ্বব্যাংকেরও সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। হুন্ডিকে চতুরভাবে উৎসাহিত করার কাজে যুক্ত কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক বা তাদের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। রপ্তানি আয় দ্রুত প্রত্যাবাসনসহ বাজারে সব উপায়ে ডলারের জোগান বাড়াতে হবে আর বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে হবে।

 

গত বছরের শেষদিকে অর্থপাচারের নতুন নতুন গন্তব্য খুঁজে পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ইউরোপের দেশ পর্তুগালে অর্থপাচারের ঘাঁটি গেড়েছে বাংলাদেশের আড়াই হাজার নাগরিকের একটি বিশাল চক্র। নিরাপদে অর্থ সরিয়ে নিতে তারা দেশটির নাগরিকত্বও নিয়েছে। এর মধ্যে তারা দেশটিতে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইয়ের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। বর্তমানে অর্থপাচারের প্রধান রুট হিসেবে দেশটি ব্যবহৃত হচ্ছে। পাচারকার্য পরিচালনার জন্য দুবাইয়ে ১৩ হাজার প্রতিষ্ঠান খুলেছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। সেখানে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। রাজনীতিবিদ ও আমলাদের অর্থপাচারের বাহক হিসেবে কাজ করছে ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলো। পদত্যাগ করা আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালীদের প্রশ্রয়ে আমদানি-রপ্তানির আড়ালে এবং হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল অর্থপাচার করে বিদেশে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে কয়েকটি শিল্পগ্রুপ।

বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার অন্যতম প্রধান মাধ্যম জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে রেমিট্যান্স সংগ্রহ। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে রেমিট্যান্স বা প্রবাস আয়। দীর্ঘসময় ধরে ধারাবাহিক পতন থেমেছে প্রবাস আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায়। এ কারণে ধীরে ধীরে প্রবাস আয় বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। এ ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন নতুন দেশে জনশক্তি রপ্তানির পথ উন্মুক্ত করতে কাজ করতে হবে।

তবে ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে প্রবাসীরা যে পরিমাণ অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন, তার অন্তত ৯০ শতাংশ বৈধ পথে আনা গেলে রেমিট্যান্সপ্রবাহে জোয়ার সৃষ্টি হবে। এর প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার ও রিজার্ভ ইতিবাচক ধারায় ফিরবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, হুন্ডি ও অন্যান্য মাধ্যমে রেমিট্যান্সের বড় অঙ্কই পাচার হয়ে যাচ্ছে। যার বার্ষিক অঙ্ক অন্তত ২৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ প্রবাসীদের দেশে পাঠানো রেমিট্যান্সের অর্ধেকই পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সরকারি কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা কিংবা লিখিত হিসাব নেই।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দক্ষ কর্মী বিদেশে পাঠানো সময়সাপেক্ষ হলেও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের মাধ্যমে পাচার বন্ধ করে রেমিট্যান্সে জোয়ার সৃষ্টি করা সম্ভব। এতে চলমান ডলার সংকট ও রিজার্ভের পতন ত্বরিত গতিতে নিয়ন্ত্রণে আসবে। তাই এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, বিদেশে অবস্থানরত দূতাবাস এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

রেমিট্যান্সপ্রবাহ- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে রেমিট্যান্স আসে ২১১ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে আসে ২১৬ কোটি ডলার, মার্চ মাসে আসে ১৯৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে ২০৪ কোটি ডলার, মে মাসে ২২৫ কোটি ডলার, জুনে ২৫৪ কোটি ডলার, জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ডলার এবং গত আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ডলার। আর চলতি মাসের ২৮ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি।

তথ্যানুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসে দুই হাজার ৩৯২ কোটি ডলার। তার আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল দুই হাজার ১৬১ কোটি ডলার। এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে দুই হাজার ১০৩ কোটি ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার, যা ছিল অর্থবছর হিসাবে সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিট্যান্স।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 bornomalanews24.com
themesba-lates1749691102