কিছুদিন আগেও যেটি ছিল অনেকটা অভাবনীয়, সেটিই এখন বাস্তব। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকায় সবার ওপরে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ফাইনালে ওঠার লড়াইয়েও সম্ভাবনায় সবচেয়ে এগিয়ে তারাই!
মূলত অক্টোবর-নভেম্বরে বাংলাদেশ সফরে দুই টেস্টে দারুণ জয়েই সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তাদের। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জিতে শীর্ষে উঠে এসেছে তারা।
ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে এখনও ভালোভাবেই আছে অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। কিছুটা টিকে আছে শ্রীলঙ্কার সম্ভাবনাও। কাগজে-কলমে এখনও ছিটকে পড়েনি পাকিস্তানও।
সব মিলিয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠার লড়াই এখন জমজমাট। আগের দুই আসরের চেয়ে এবার ফাইনালে ওঠার লড়াই আরও বেশি তীব্র।
প্রথম আসরের শিরোপাজয়ী নিউ জিল্যান্ডের সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে ইংল্যান্ডের কাছে দুই টেস্টে হেরে। ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিটকে পড়েছে আরও আগেই।
দেখে নেওয়া যাক কোন দলের সামনে ফাইনালের পথ এখন কেমন:
দক্ষিণ আফ্রিকা
পয়েন্টের শতাংশ : ৬৩.৩৩
ম্যাচ বাকি : দুটি (ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে)
শ্রীলঙ্কাকে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আসরে তাদের ম্যাচ বাকি আর দুটি। ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই সিরিজের একটি ম্যাচ জিতলেই প্রথমবার ফাইনালে ওঠা নিশ্চিত হয়ে যাবে প্রোটিয়াদের জন্য।
সিরিজটি তারা ২-০ বা ১-০তে সিরিজ জিততে পারলে তো আর কোনো সমস্যাই নেই। সিরিজটি যদি ১-১ ড্র হয়, তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকার পয়েন্টের শতকরা হার হবে ৬১.১১। সেক্ষেত্রে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে কেবল একটি দল তাদেরকে টপকে যেতে পারবে।
সিরিজটি যদি ০-০ ড্র হয়, তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকার পয়েন্ট হবে ৫৮.৩৩ শতাংশ। অন্য সিরিজে ভারত যদি অস্ট্রেলিয়াকে ৩-২ ব্যবধানে হারায় এবং অস্ট্রেলিয়া পরে শ্রীলঙ্কা সফরে দুটি টেস্ট ম্যাচই জিতে নেয়, তাহলে অস্ট্রেলিয়া (৬০.৫৩) ও ভারত (৫৮.৭৭) টপকে যেতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজটি ১-০ ব্যবধানে হারলেও দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য সুযোগ থাকবে। সেক্ষেত্রে তাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে, অস্ট্রেলিয়া জন্য বাকি পাঁচ ম্যাচে দুটির বেশি জয় না পায়, অথবা বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির বাকি তিন ম্যাচে ভারত যেন একটি জয় ও একটি ড্রয়ের বেশি কিছু না পায়।
তবে তাদের ভাগ্য নিজেদের হাতেই। পাকিস্তানের সঙ্গে একটি টেস্ট জিতলেই সমীকরণের জটিলতায় আর যেতে হবে না।
শ্রীলঙ্কা
পয়েন্টের শতাংশ : ৪৫.৪৫
ম্যাচ বাকি : দুটি (ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে)
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুটি টেস্ট ম্যাচেই হেরে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কার সম্ভাবনায় বড় চোট লেগেছে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দুটি ম্যাচ জিততে পারলে তাদের পয়েন্ট হবে ৫৩.৮৫ শতাংশ। তার পরও তাদের ভাগ্য নির্ভর করবে অন্যদের ওপর।
দক্ষিণ আফ্রিকা তো ভালোভাবেই এগিয়ে থাকতে পারে তাদের চেয়ে। ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে একটি দলও টপকে যেতে পারে লঙ্কানদের। বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির বাকি তিন ম্যাচে একটি জয় ও একটি ড্র হলেই ভারতের পয়েন্ট হয়ে যাবে বেশি। লঙ্কানদের টপকে যেতে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন পড়বে দুটি জয়।
শ্রীলঙ্কার সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ৫৩.৮৫ শতাংশের চেয়ে অস্ট্রেলিয়া-ভারতের পয়েন্ট কম থাকতে হলে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়াকে জিততে হবে ২-১ ব্যবধানে। যেটির মানে, বাকি তিন টেস্টের দুটি ড্র হতে হবে, একটি জিততে হবে প্যাট কামিন্সদের।
দক্ষিণ আফ্রিকাও অবশ্য শ্রীলঙ্কার পেছনে পড়তে পারে। তবে সেজন্য অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই টেস্টই জিততে হবে লঙ্কানদের, পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটিই হারতে হবে প্রোটিয়াদের।
ভারত
পয়েন্টের শতাংশ : ৫৭.২৯
ম্যাচ বাকি : তিনটি (বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়াতে)
নিজেদের পারফরম্যান্সে ফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করতে হলে অস্ট্রেলিয়া সফরে বাকি তিন টেস্টের দুটি জিততে হবে ভারতকে, ড্র করতে হবে একটি। সেটি করতে পারলে তাদের পয়েন্ট হবে ৬০.৫৩ শতাংশ, যেটিতে পয়েন্ট তালিকায় তাদের অন্তত দুইয়ে থাকা নিশ্চিত হবে।
ভারত যদি এটি করতে পারে, তাহলে শ্রীলঙ্কা সফরে দুটি ম্যাচ জিতলেও অস্ট্রেলিয়ার পয়েন্ট হবে ৫৭.০২ শতাংশ।
বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে ভারত যদি ৩-২ ব্যবধানে জেতে, তাহলে তাদের পয়েন্ট হবে ৫৮.৭৭ শতাংশ। তখন শ্রীলঙ্কাকে ১-০তে হারালেও অস্ট্রেলিয়ার পয়েন্ট থাকবে ভারতের কম।
অস্ট্রেলিয়াতে ২-৩ ব্যবধানে সিরিজ হারলে ভারতের পয়েন্ট হবে ৫৩.৫১ শতাংশ। সেক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকা, সবার সামনে সুযোগ থাকবে রোহিত শার্মার দলকে টপকে যাওয়ার।
যদিও ২-৩ ব্যবধানে সিরিজ হারলেও ভারতের সুযোগ থাকবে, তবে তাকিয়ে থাকতে হবে অন্যদের দিকে। তখন পাকিস্তানের কাছে দুটি ম্যাচই হারতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে এবং শ্রীলঙ্কায় অন্তত একটি ম্যাচ ড্র করতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে।
অস্ট্রেলিয়া
পয়েন্টের শতাংশ : ৬০.৭১
ম্যাচ বাকি : পাঁচটি (বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে তিনটি, শ্রীলঙ্কা সফরে দুটি)
বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির বাকি তিন ম্যাচের দুটি জিতলেই ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলবে অস্ট্রেলিয়া। শ্রীলঙ্কা সফরের অপেক্ষায় তখন আর থাকতে হবে না তাদের।
ভারতকে যদি তারা ৩-২ ব্যবধানে হারায় ও পরে শ্রীলঙ্কায় গিয়ে দুটি ম্যাচই হারে, তার পরও তাদের পয়েন্ট হবে ৫৫.২৬ শতাংশ। ভারতের পয়েন্ট তখন থাকবে ৫৩.৫১ ও শ্রীলঙ্কার থাকবে ৫৩.৮৫। অস্ট্রেলিয়ার তাই অন্তত দুইয়ে থাকা তখন নিশ্চিত।
তবে চলতি সিরিজটি ভারত ৩-২ ব্যবধানে জিতে গেলে তাদের পয়েন্ট হবে ৫৮.৭৭ শতাংশ। তাদেরকে টপকে যেতে তখন শ্রীলঙ্কা সফরে দুটি ম্যাচই জিততে হবে প্যাট কামিন্সদের।
শ্রীলঙ্কায় দুটি ম্যাচ জিততে না পারলেও অস্ট্রেলিয়ার সুযোগ থাকবে। তখন তাদের আশা করত হবে, পাকিস্তানের বিপক্ষে যেন একটি ড্রয়ের বেশি না পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। পাকিস্তানের কাছে ১-০তে হারলে প্রোটিয়াদের পয়েন্ট হবে ৫৫.৫৬ শতাংশ। তখন শ্রীলঙ্কায় ১-০ ব্যবধানে জিতলেও প্রোটিয়াদের টপকে যাবে অস্ট্রেলিয়া।
পাকিস্তান
পয়েন্টের শতাংশ : ৩৩.৩৩
ম্যাচ বাকি : চারটি (দক্ষিণ আফ্রিকায় দুটি, দেশের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুটি)
পাকিস্তানের সম্ভাবনা টিকে আছে আদতে কেবল গাণিতিক হিসেবেই। বাস্তবে লক্ষ্যটা প্রায় অসম্ভব তাদের জন্য। বাকি চার ম্যাচের সবকটি জয়ের পরও তাদেরকে আশা করতে হবে, যেন মন্থর ওভার-রেটের কারণে পয়েন্ট কাটা যায় দক্ষিণ আফ্রিকার।
বাকি চারটি ম্যাচ জিতলে পাকিস্তানের পয়েন্ট হবে ৫২.৩৮ শতাংশ। তখনও তারা থাকবে দক্ষিণ আফ্রিকার (৫২.৭৮) পেছনে।
দক্ষিণ আফ্রিকা যদি ওভার-রেটের কারণে পয়েন্ট হারায় এবং অন্যান্য ম্যাচগুলির নানা জটিল সমীকরণ তাদের পক্ষে আসে, তাহলে অস্ট্রেলিয়া কিংবা ভারতের পেছনে থেকে দুইয়ে থাকতে পারে পাকিস্তান। তবে বাস্তবতা নিশ্চয়ই তারাও জানেন।