ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। তবে তাঁর প্রস্তাবিত নীতিমালা নিয়ে এখন থেকেই বিশ্ব অর্থনীতিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। নিজ দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে সুরক্ষা দিতে তিনি যেসব পদক্ষেপ নেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন, তার প্রভাব ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে দেখা যাচ্ছে।
কানাডায় রাজনৈতিক টানাপোড়েন
ট্রাম্পের নীতির প্রভাব সরাসরি দেখা গেছে কানাডায়। অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতানৈক্যের কারণে পদত্যাগ করেছেন। ফ্রিল্যান্ডের আশঙ্কা, ট্রাম্প কানাডার রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলে তা দেশের জন্য বড় বিপদের কারণ হবে। এ নিয়ে দেশটির সরকারের মধ্যে ভাঙনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিন্তা-ভাবনা
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ চলতি সপ্তাহে সুদের হার কমিয়েছে। তবে ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল জানিয়েছেন, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ, কর কমানো এবং অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ নীতির ফলে অর্থনৈতিক চাপে পরিবর্তন আসতে পারে। এসব কারণে ফেড আগামী বছরে মাত্র একবার সুদের হার কমানোর পরিকল্পনা করছে।
পাওয়েল আরও বলেন, সুদের হার কমানোর বিষয়ে বাজার পরিস্থিতি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। তবে এ সিদ্ধান্তের প্রভাব ইতিমধ্যেই শেয়ারবাজারে পড়তে শুরু করেছে, শেয়ারের দাম কমছে।
এশিয়া ও ইউরোপের প্রস্তুতি
জাপান তার রপ্তানি-নির্ভর অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কিত। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অর্থনীতি ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েছে। রয়টার্সের এক জরিপে দেখা গেছে, তিন-চতুর্থাংশ জাপানি ব্যবসায়ী মনে করেন, ট্রাম্পের নীতিমালা তাঁদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ইউরোপেও একই ধরনের শঙ্কা বিরাজ করছে। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ড জানিয়েছেন, প্রবৃদ্ধি হ্রাসের ঝুঁকি এবং বাণিজ্য নিয়ে টানাপোড়েন বাড়বে। তবে সুদের হার কমানোর বিষয়ে তিনি এখনো স্পষ্ট কোনো ইঙ্গিত দেননি।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ও বিটকয়েন নিয়ে বিতর্ক
ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনাও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্প একটি কৌশলগত মজুত গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল জানিয়েছেন, এ বিষয়ে ফেডের কোনো আইনি কর্তৃত্ব নেই এবং মজুত গঠনের জন্য আইন পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনাও নেই। পাওয়েলের এই মন্তব্যের পর বিটকয়েনের মূল্য হ্রাস পেয়েছে।
সামনের চ্যালেঞ্জ
বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের আর্থিক নীতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে অটোয়া থেকে টোকিও পর্যন্ত যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা সংকটপূর্ণ পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়। বিশেষত, ট্রাম্পের নীতি বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা এখনো অনিশ্চিত।