বাংলাদেশে গ্যাসের চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ ক্রমাগত কমছে, যা দেশের শিল্প খাতের উৎপাদনকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দুই বছর আগে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক গ্যাস সরবরাহ ছিল প্রায় তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট, যা বর্তমানে কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৯৮ মিলিয়ন ঘনফুটে। এই ঘাটতির ফলে শিল্প-কারখানার উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে, এবং সিএনজি স্টেশন ও আবাসিক খাতেও গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাসের সংকটের কারণে সিরামিক, ইস্পাত ও টেক্সটাইল খাতের উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমেছে। শিল্পোদ্যোক্তারা অভিযোগ করেছেন যে, গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, অথচ সরবরাহ বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এর ফলে শিল্প খাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে, বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এবং রপ্তানি আয়ও কমেছে। বিনিয়োগের হারও থমকে গেছে, ফলে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের গ্যাস উৎপাদন গত কয়েক বছরে কমে গেছে। চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়ানো হয়েছে, তবে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে, যা শিল্প খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা প্রায় চার হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট, কিন্তু সরবরাহ হচ্ছে মাত্র দুই হাজার ৬৯৮ মিলিয়ন ঘনফুট, ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে দেড় হাজার মিলিয়ন ঘনফুটে। গাজীপুর, চট্টগ্রাম, সাভার ও নরসিংদীর শিল্প-কারখানাগুলোতে গ্যাসের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। গাজীপুরের কেয়া গ্রুপের কারখানায় গ্যাসের চাপ ৫০ পিএসআই থেকে নেমে ৫-৭ পিএসআইয়ে চলে এসেছে, যা উৎপাদন ব্যাহত করছে। সাভার-আশুলিয়ায় প্রায় দেড় হাজার শিল্প-কারখানার মধ্যে গ্যাসের চাপ অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে, ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কেরানীগঞ্জের ৩০টি শিল্প-কারখানার মধ্যে বেশিরভাগই গ্যাসের অভাবে উৎপাদন কমাচ্ছে। চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেড জানিয়েছে, সেখানে গ্যাসের প্রয়োজন ২৬০-২৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট, কিন্তু সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ২৩০-২৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং বহু কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শিল্প মালিকরা জানিয়েছেন, গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে, এবং তারা বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপিজি ও ডিজেল ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে, শিল্প খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি থমকে যাবে যদি শিল্প খাত না বাঁচে। তাই গ্যাস ও বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর জন্য দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজন। শিল্প খাতের এই সংকট মোকাবেলায় সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি, নাহলে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে।