প্রেম, বিয়ে আর বিশ্বাসের মাঝে এক অদৃশ্য অথচ তীব্র আলো-আঁধারির নাম ‘পরকীয়া’। যুগের পর যুগ ধরে আলোচিত এই শব্দটি সম্পর্কের জগতে সবচেয়ে বিতর্কিত অধ্যায়গুলোর একটি। এটি শুধু একটি শারীরিক বা মানসিক বিচ্যুতি নয়, বরং সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মানসিক এমনকি অর্থনৈতিক নানা প্রেক্ষাপটে গঠিত একটি জটিল বাস্তবতা।
সম্প্রতি কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনফিডেলিটি রিকভারি ইনস্টিটিউটের এক যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে পরকীয়ার নেপথ্যের বহুস্তরীয় কারণ। গবেষকরা বলছেন, মানুষ কেবল যৌন চাহিদার জন্য নয়, বরং ভালোবাসা, গুরুত্ব বা মানসিক প্রশ্রয় না পাওয়ার কারণেও অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। কখনও কৌতূহল, কখনও বিষণ্নতা বা ক্লান্তির ছায়ায় ঢেকে যায় সম্পর্কের স্বচ্ছতা।
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির কিনসি ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. জাস্টিন লেমিলারও তার বই ‘টেল মি হোয়াট ইউ ওয়ান্ট’-এ উল্লেখ করেছেন, সুখী দম্পতির মধ্যেও একঘেয়েমি, উত্তেজনার খোঁজ বা নতুন অভিজ্ঞতার লোভে কেউ কেউ সম্পর্কের বাইরে পা রাখেন।
গবেষণাগুলোতে যে বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে, তা হলো: দাম্পত্যে বোঝাপড়ার অভাব, মানসিক চাপ, দায়িত্ব থেকে পালানোর আকাঙ্ক্ষা, প্রযুক্তির সহজলভ্যতা এবং কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় কাটানোর পারিপার্শ্বিকতা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অল্প বয়সে বিয়ে, শৈশবের মানসিক আঘাত, কিংবা পূর্বের বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিশোধ নেয়ার মানসিকতা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পরকীয়া রোধে সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হলো – খোলামেলা ও নিয়মিত যোগাযোগ, একে অপরের প্রতি মনোযোগ এবং সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। সম্পর্ক মানে শুধু ভালোবাসা নয়, এটি দায়িত্ব, শ্রদ্ধা আর বোঝাপড়ারও প্রতিফলন। আর সেই প্রতিফলনের সামান্য ফাটল থেকেই জন্ম নেয় বিশ্বাসঘাতকতার গল্প, যাকে আমরা চিনি ‘পরকীয়া’ নামে।
সমাজ ও সম্পর্কের এই গভীর ছায়াপথে আলো ফিরিয়ে আনা সম্ভব—তবে তার জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত উপলব্ধি, সচেতনতা ও আন্তরিকতা।