দেশে প্রায় দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে। গত মাসে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০.৪৯ শতাংশ। সে অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি এখন সর্বোচ্চ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শেখ হাসিনার সাবেক সরকার মূল্যস্ফীতি কমাতে নানা উদ্যোগ নিলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি।নতুন সরকার বেশ কিছু ভালো উদ্যোগ নিচ্ছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে আশা করা যায় মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে উত্তাল গত জুলাইয়ে দেশে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ ছিল। আগস্টে ১ শতাংশেরও বেশি মূল্যস্ফীতি কমে।যদিও তা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতির হার দীর্ঘদিন ধরে ছিল দুই অঙ্কের ঘরে। অর্থনৈতিক সংকটে হাবুডুবু খাওয়া দেশটির মূল্যস্ফীতির হারও এরই মধ্যে এক অঙ্কের ঘরে নেমে এসেছে। গত মাসে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৬৪ শতাংশ।
যদিও এক বছর আগে ২০২৩ সালের আগস্টে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ২৭ শতাংশেরও বেশি। বর্তমানে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার পাকিস্তানের চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১.৬৬ শতাংশ। আগস্টে এই হার কিছুটা কমলেও তা দুই অঙ্কের ঘরেই রয়ে গেছে এখনো। গত মাসে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০.৪৯ শতাংশ।
সে অনুযায়ী গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি এখন সর্বোচ্চ। আগস্টে শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতির হার ছিল মাত্র ০.৫ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ১.৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতি রয়েছে মালদ্বীপে। ভুটানে ২.০৪, নেপালে ৩.৫৭, ভারতে ৩.৬৫ ও পাকিস্তানে ৯.৬৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে।
বাংলাদেশে গত দুই অর্থবছরজুড়েই মূল্যস্ফীতির গড় হার ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। যদিও বিবিএস প্রকাশিত এই মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন রয়েছে। বাজারে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির হারের সঙ্গে সংস্থাটির দেওয়া মূল্যস্ফীতির তথ্যের ব্যবধান অনেক বেশি বলে দাবি করে আসছিলেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা।
তাদের ভাষ্য মতে, বিগত সরকারের টানা দেড় দশকের শাসনামলে দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। সরকারের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির বর্ণনার প্রচারের কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম বিবিএস। সংস্থাটিকে ব্যবহার করে জনসংখ্যা, জিডিপির আকার-প্রবৃদ্ধি থেকে শুরু করে অর্থনীতির প্রতিটি খাতেই ভুল ও প্রশ্নবিদ্ধ পরিসংখ্যান তৈরি ও উপস্থাপন করা হয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পরও বিবিএস থেকে মূল্যস্ফীতির যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সেটির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পরও আগস্টে মূল্যস্ফীতি কমে যাওয়ার বিষয়টি অস্বাভাবিক।
মূল্যস্ফীতি না কমার বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রথমত আগের সরকার মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি। আগের সরকোর সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কথা বললেও কোথাও সংকোচন দেখা যায়নি। এখন কিছুটা দেখা যাচ্ছে। ডলার সংকটের কারণে আমদানি কমে গিয়েছিল। এতে কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এখন যদি বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা যায়, সংকোচন নীতি ধরে রাখা যায়, ডলার সংকট কাটানো যায়, তাহলে আশা করা যায় শিগগিরই মূল্যস্ফীতি কমবে।