বড় ঋণগ্রহীতা নিয়ে কাজ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গঠন করা টাস্কফোর্স। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১৪ কর্মকর্তাকে দুর্দশায় থাকা ব্যাংকগুলো পরিদর্শনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন বিদেশি কয়েকজন পরিদর্শক নিয়োগের মাধ্যমে টাস্কফোর্স কার্যক্রম শুরু করবে। ইসলামী ব্যাংকসহ ৯টি ব্যাংকে কার্যক্রম চালাবে টাস্কফোর্স। এসব ব্যাংক থেকে বড় ঋণগ্রহীতা নামে-বেনামে যে অর্থ বের করে নিয়ে গেছে, তা নিরূপণ করা হবে। এই অর্থ বাইরে গেলে তা কীভাবে ফিরিয়ে আনা হবে, তা নিয়েও কাজ করবে টাস্কফোর্স। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
গতকাল টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আহসান এইচ মনসুর বলেন, টাস্কফোর্স মূলত তিনটি বিষয়ে কাজ করবে। প্রথমত ব্যাংকগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদ নির্ণয় করবে। এরপর ব্যাংকগুলোর সম্পদ কোথায় আছে তা চিহ্নিত করবে। এরপর ওই সম্পদ পুনরুদ্ধারে কাজ করবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম ধাপে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১৪ জন কর্মকর্তাকে তিনভাগে বিভক্ত করে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে দুই গ্রুপে চারজন করে কর্মকর্তা থাকবেন। আর অন্য গ্রুপে রয়েছেন ছয়জন। এ ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক বড় ব্যাংক হওয়ায় পরির্দশনের দায়িত্বে থাকবেন ছয়জন কর্মকর্তা। পাশাপাশি নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি নিরীক্ষকদের যুক্ত করা হবে। এ ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থ সহায়তা দেবে।
তিনি বলেন, আমরা প্রথমে দেখব ব্যাংক থেকে নামে বা বেনামে কী পরিমাণ অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে। এরপর ওই অর্থ যদি দেশের বাইরে চলে যায় তাহলে সেগুলো কীভাবে আন্তর্জাতিক আইনের সহায়তায় আনা যায়, সে বিষয়ে কাজ করব। এ ক্ষেত্রে আমরা বড় কেসগুলো নিয়ে কাজ করব। আমাদের যদি ৪ লাখ কোটি টাকার মতো খারাপ সম্পদ থেকে থাকে তার অর্ধেক হয়তো অল্প কয়েকজন ব্যক্তির কাছে গেছে। এজন্য তাদের ওপর বেশি ফোকাস থাকবে। আর ছোটগুলো সিস্টেমেটিক ওয়েতে তুলে আনা হবে।গভর্নর বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছি। আমাদের রেমিট্যান্স বাড়ছে। যদি এসব ব্যাংক রেমিট্যান্স ভালো পায় তাহলে তাদের তারল্য প্রবাহ বাড়ার সহায়তা করবে। রেমিট্যান্স যখন তারা বিক্রি করবে তখন তাদের হাতে টাকা চলে আসবে। এভাবেই তারা রিকভার করতে পারবে।ব্যাংক একীভূত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো কোনো সিদ্ধান্তে যায়নি জানিয়ে গভর্নর বলেন, আমরা চেষ্টা করব ছোট ছোট ব্যাংকগুলো একীভূত করে ফেলা যায় কি না। এটা করতে পারলে ভালোই হবে। এসব ব্যাংকগুলোতে যেহেতু মূলধন সহায়তা আমরাই করব সে ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ অনেকগুলো ব্যাংকের আগের মালিকরা অনিয়ম করে তাদের মালিকানা হারিয়েছেন। এখন ওই মালিকানা সরকারের জন্য একীভূত করা সহজ হবে। বাস্তবতা বুঝে আমরা কাজ করব। তবে কয়েকটি ব্যাংক কমিয়ে ফেলা অবশ্যই ভালো হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক একীভূত হলেও আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।গভর্নর বলেন, কিছু ব্যাংক থেকে গ্রাহক টাকা তুলে অন্য ব্যাংকে রাখছে। যেসব ব্যাংক থেকে টাকা তোলা হচ্ছে তারা তারল্য সংকটে পড়ছে। আবার যাদের কাছে রাখা হচ্ছে তাদের তারল্য বেড়ে যাচ্ছে। এজন্য আমরা গ্যারান্টার হয়ে তারল্য বেশি থাকা ব্যাংকগুলো থেকে কম থাকা ব্যাংকগুলোকে টাকা দেব। এ ক্ষেত্রে দুর্বল ব্যাংক টাকা না দিতে পারলে ওই টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক পরিশোধ করবে। এখন পর্যন্ত এই স্কিম থেকে কাউকে টাকা দেওয়া হয়নি। যদি এদের অবস্থা ভালো হয়ে যায় তাহলে কাউকে দিতেও হবে না। যার যত টাকা দরকার, সেই অনুযায়ী টাকা দেওয়া হবে। তবে এসব ব্যাংকগুলোর এখন ক্যাশফ্লো ভালো রয়েছে। গত কয়েক দিনে ব্যাংকগুলোর তারল্য উদ্বৃত্ত আছে ৮১০ কোটি টাকা। আশা করি সমস্যা সমাধান হবে।তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় চলতি সপ্তাহে আবারও নীতি সুদহার (পলিসি রেট) বৃদ্ধি করা হবে। এরপর আগামী মাসে আরও কিছুটা বাড়ানো হবে। বর্তমানে নীতি সুদহার ৯ শতাংশে রয়েছে। গত বছরের মার্চ থেকে দেশের মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি থাকায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শের সঙ্গে মিল রেখে নীতি সুদহার বাড়ানো হচ্ছে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। আশা করি আগামীতেও বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকবে। যদি এটা ধরে রাখা যায় তাহলে মূল্যস্ফীতি অবশ্যই কমে আসবে। তাছাড়া আমাদের বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণের যেই লক্ষ্য রাখা হয়েছে, তা ৫০ হাজার কোটি টাকা কমানো হতে পারে। এটা হলে বেসরকারি বিনিয়োগও ঠিক হয়ে আসবে। সবমিলিয়ে আমরা যদি মূল্যস্ফীতি চার-পাঁচে নামিয়ে আনতে পারি তাহলে সুদের হারও আমরা কমিয়ে আনতে পারব। সেজন্য সময় দিতে হবে।