দেশকে এগিয়ে নিতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে—এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, “আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। তবে, আমরা আলোচনা করব, আবারও বসব। এক আলোচনায় যদি শেষ না হয়, তাহলে নতুন করে আলোচনা শুরু হবে। কিন্তু, যদি আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত আলোচনা করি, তাহলে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজ পিছিয়ে যাবে। রাষ্ট্র পুনর্গঠন থেকে যদি আমরা পিছিয়ে যাই, তাহলে দেশের মানুষ ও দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
আজ শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আশুগঞ্জ উপজেলার আব্বাস উদ্দিন খান মডেল কলেজে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে তারেক রহমান আরও বলেন, “যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমরা বিগত ১৭ বছর আন্দোলন করেছি, সেই স্বৈরাচার আজ পলাতক। তারা বিভিন্নভাবে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। ষড়যন্ত্রকারীরা কিন্তু বসে নেই। বিভিন্ন দাবিদাওয়ার অছিলায় তারা তাদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। স্বৈরাচারের মাথাটা পালিয়ে গিয়েছে, কিন্তু কিছু অবশিষ্ট রয়ে গেছে বাংলাদেশে। এরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে, আবার দেশকে তাদের দখলে নিতে। তাদের এই লক্ষ্য আমরা হাসিল করতে দিতে পারি না। দেশের মানুষকে রক্ষা করতে হলে, সর্বোপরি বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের সবাইকে যেকোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”
তারেক রহমান বলেন, “মতপার্থক্য থাকতেই পারে। আলোচনা করেই আমরা সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করব। আমাদের সামনে অনেক কাজ রয়েছে। রাষ্ট্রকাঠামো পুনর্গঠনের ৩১ দফা রূপরেখা আমরা দিয়েছি। এর মধ্যে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষাব্যবস্থা, বেকারদের কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও কৃষির উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে। সমগ্র দেশকে পুনর্গঠনের জন্য আমাদের কী করতে হবে, সেই বিষয়গুলোও উল্লেখ করা হয়েছে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “আজ যদি নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আমরা তর্কে লিপ্ত থাকি, তাহলে দেশ ধ্বংসের কিনারায় পৌঁছে যাবে। আজকের তর্ক-বিতর্কের ফলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে পালিয়ে যাওয়া সেই স্বৈরাচার। দেশ ও দেশের মানুষ তাকিয়ে আছে আপনাদের (বিএনপি) দিকে। আপনারা কীভাবে দেশকে পুনর্গঠন করবেন, কীভাবে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।”
বিএনপির শীর্ষ নেতা আরও বলেন, “বিভিন্ন মতামত থাকতে পারে। রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়, যেমন সংসদ পরিচালনা, সংসদের মেয়াদ, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সংখ্যা—এসব নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু, সেই বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। যদি আমরা মাত্রাতিরিক্ত আলোচনা করি, রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে পিছিয়ে যাব। রাষ্ট্র পুনর্গঠন থেকে যদি আমরা পিছিয়ে যাই, তাহলে দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
তারেক রহমান বলেন, “পৃথিবীর যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে বিতর্ক থাকে। কিন্তু, দিন শেষে সেই বিতর্ক জনগণের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেটি করার একমাত্র উপায় হচ্ছে নির্বাচন—জাতীয় নির্বাচন।”
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “কাজ একটি, লক্ষ্য একটি, কথা একটি—দেশ পুনর্গঠন করতে হবে। দেশ গড়ে তুলতে হবে। দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এটিই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা ও শপথ। যেকোনো মূল্যে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, ঐক্য, ঐক্য, ঐক্য। ঐক্য ছাড়া কোনো কাজে আমরা সফল হতে পারব না।”
সম্মেলনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা, কুমিল্লার বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিম ভূঁইয়া, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক খালেদ হোসেন (মাহবুব), জেলা বিএনপির সদস্য কবির আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন। সম্মেলন সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম ও সদস্য জহিরুল হক।