সাম্প্রতিক দিনগুলিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তপ্ত সীমান্তে হামলা-পাল্টা হামলার পর শনিবার (১০ মে) উভয় দেশ একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ রাতব্যাপী আলোচনার পর এই সমঝোতা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “দুই দেশ তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। দিনভর কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পর এই চুক্তি সম্ভব হয়েছে।” তিনি এই প্রক্রিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর ভূমিকার বিশেষ প্রশংসা করেন। দার আরও যোগ করেন, “পাকিস্তান সবসময় এই অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করেছে, তবে আমাদের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা কখনোই আপসের বিষয় নয়।” অন্যদিকে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক বিবৃতিতে বলেন, “ভারত ও পাকিস্তান সমস্ত প্রকার গুলিবর্ষণ ও সামরিক কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে একমত হয়েছে।” তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার শূন্য সহনশীলতা নীতি অব্যাহত রাখবে।” ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রি জানান, দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মহাপরিচালকরা (ডিজিএমও) শনিবার বিকেল ৫টা থেকে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রসীমায় সমস্ত সামরিক কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট বাহিনীকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার হুকুম দেওয়া হয়েছে। এর আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়ে লেখেন, “যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ আলোচনার পর আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি, ভারত ও পাকিস্তান পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। সাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার জন্য দুই দেশকে অভিনন্দন।” গত কয়েকদিন ধরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছিল। গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত পাকিস্তানের ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালায়। জবাবে পাকিস্তান ভারতীয় সীমান্তে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে এবং কয়েকটি ভারতীয় বিমান ও ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করে। এই সংঘাতের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার শান্তির আহ্বান জানালেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছিল না। এখন এই যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে অন্তত সামরিক সংঘাতের অবসান হলেও কাশ্মীর ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান এখনও অনিশ্চিত। বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজর এখন দুই দেশের পরবর্তী কূটনৈতিক পদক্ষেপের দিকে।