ঢাকা মহানগরের বাড্ডা গুদারাঘাট এলাকায় রবিবার রাতে ঘটে গেল এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। মাত্র আড়াই মিনিটের পরিকল্পিত মিশনে খুন হন গুলশান বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কামরুল আহসান সাধন। রাত ১০টা ২৩ মিনিট ১৪ সেকেন্ডে হত্যাকারীরা তাদের মিশন শুরু করে এবং ১০টা ২৫ মিনিট ৪০ সেকেন্ডে তা শেষ করে। বাড্ডার ৪ নম্বর রোডের একটি দোকানের সামনে বসে থাকা সাধনকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য আরও দুই রাউন্ড গুলি করে নির্বিঘ্নে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় সূত্র ও তদন্ত সংশ্লিষ্টদের মতে, বাড্ডা এলাকায় ডিশ এবং ইন্টারনেট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা বিরোধের মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহত সাধন সম্প্রতি এই ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নেন। বাড্ডা এবং গুলশান এলাকার ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসার পূর্বে নিয়ন্ত্রণ ছিল ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বাবুল আহমেদের হাতে। কিন্তু ৫ আগস্টের পর থেকে এই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন তিনি। এরপরই সাধন এই ব্যবসার বড় একটি অংশের তদারকি শুরু করেছিলেন। সাধন সম্পর্কে এলাকাবাসীর অনেকেই জানান, তিনি মালয়েশিয়া পলাতক কুখ্যাত সন্ত্রাসী মাহবুবের মামা। এ কারণে স্থানীয়ভাবে তিনি “মামা সাধন” নামেও পরিচিত ছিলেন। তার এই পরিচিতি এবং প্রভাবই তাকে বাড্ডা এলাকায় প্রভাবশালী করে তোলে। ঘটনার দিন সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ১০টা ২৩ মিনিটে বাড্ডার সাবেক কমিশনার কাইয়ুমের কার্যালয়ের বিপরীতে একটি চায়ের দোকানে বসে চা পান করছিলেন সাধন। তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপি নেতা কাইয়ুমের ভাগিনা কামরুলসহ আরও কয়েকজন। এ সময় মুখে মাস্ক পরা দুই যুবক তাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যায়। পরে কিছু দূর গিয়ে তারা ফিরে এসে সরাসরি সাধনের দিকে এগিয়ে আসে। রাত ১০টা ২৫ মিনিট ৪০ সেকেন্ডে তাদের একজন খুব কাছ থেকে সাধনের শরীরে তিন রাউন্ড গুলি করে। গুলির আঘাতে ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন সাধন। হত্যাকারীরা এরপর আরও দুই রাউন্ড গুলি ছুড়ে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে পুরো বাড্ডা এলাকায় শোক এবং আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী এবং রাজনৈতিক মহলে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ব্যবসায়িক বিরোধকে প্রাথমিক কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা হত্যার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতি এবং ব্যবসায়িক পরিবেশের সাথে জড়িত এই হত্যাকাণ্ড আরও একবার দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।