বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে চলমান সংকট এখন শিল্প খাতকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। জ্বালানি দামের সমন্বয় এবং গ্যাসের ঘাটতির কারণে দেশের প্রায় অর্ধেক ব্যবসায়ী ঋণখেলাপির ঝুঁকিতে রয়েছেন। এমন এক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, যার ফলস্বরূপ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে দেশের অর্থনীতি ও শিল্পক্ষেত্রে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হচ্ছে।
বুধবার, রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) কর্তৃক আয়োজিত একটি সেমিনারে বক্তারা এসব উদ্বেগজনক মন্তব্য করেছেন। বক্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য জ্বালানি খাতের সংকট বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। তাদের আশঙ্কা, যদি দ্রুত গ্যাস সরবরাহে স্বচ্ছতা ও স্থিরতা নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে দেশের শিল্প খাতে বিপর্যয় আরও বাড়বে।
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বক্তারা আরও উল্লেখ করেন যে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সঠিক পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের অভাব রয়েছে। বাজেটে জ্বালানি খাতের জন্য কার্যকরী কোনো নীতিগত দিকনির্দেশনা নেই, যা বর্তমান পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। এসময় বক্তারা পরিবেশবান্ধব নীতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সরকারের আগ্রহের অভাবের সমালোচনা করেন।
বিজিএমইএ-এর পরিচালক ফয়সাল সামাদ জানান, শিল্পখাতে গত ২০ বছর ধরে বাজেট প্রস্তুত করা হচ্ছে কোনো সুপরিকল্পনা ছাড়াই। তিনি উল্লেখ করেন, গ্যাস সরবরাহ না পেলে আর্থিক প্রণোদনা এবং ঋণ শোধ আদেশে ছাড় দিতে হবে, নতুবা অনেক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যাবে।
এদিকে, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা এম শামসুল আলম সরকারী কর্মকর্তাদের প্রতি কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে একটি ফ্যাসিবাদী শাসন চলছে, যেখানে সাধারণ মানুষের মতামতকে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে এবং সরকার নিজেদের ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তিনি বিশেষভাবে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানকে লক্ষ্য করে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যদি এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না হয়, তাহলে বাংলাদেশের শিল্পখাত আরও দুর্বল হয়ে যাবে।
এছাড়া, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহসভাপতি আখতার হোসেন অপূর্ব গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পরেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের অভাব উল্লেখ করেন এবং গ্যাসক্ষেত্র খনন ও উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
জ্বালানি খাতে বর্তমান সরকারের বিপুল ব্যয়ের কার্যকর ফল হয়নি, বরং অপচয় ও দুর্নীতি বেড়েছে, মন্তব্য করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বাজেট প্রসঙ্গে বক্তব্যের সময়। তিনি নতুন সরকারের কাছে সুশাসনের দাবি তোলেন এবং খাতটির কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
এই সংকটের প্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশ জ্বালানি খাতে আরও গভীর সমস্যায় পড়তে পারে, যা দেশের শিল্পখাত ও অর্থনীতির জন্য বিপর্যয়কর হতে পারে।