গুলশান, ঢাকা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডকে ইচ্ছাকৃতভাবে ভ্রান্ত উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। শনিবার (১২ জুলাই) জুলাই অভ্যুত্থান দিবসে ছাত্রদলের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেন, হত্যাকারীকে অন্য জায়গা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে এবং তাকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না। তার মতে, “প্রকৃত অপরাধী রক্ষা পাচ্ছে, আর নির্দোষদের টার্গেট করা হচ্ছে।”
অনুষ্ঠানে তারেক রহমান প্রশাসনের ভূমিকাকে কঠোর ভাষায় প্রশ্নবিদ্ধ করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিএনপি চালায় না, সরকার চালায়। তাহলে খুনিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন?” তিনি উল্লেখ করেন যে বিএনপি কখনও অপরাধীদের প্রশ্রয় দেয়নি এবং দলের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে সরকারের এই নিষ্ক্রিয়তাকে তিনি “নতুন ষড়যন্ত্রের সূচনা” হিসেবে চিহ্নিত করেন।
গণঅভ্যুত্থানে নিহত ছাত্রদলের ১৪২ জন শহীদ পরিবারের সদস্যরা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে স্বজনদের ছবি হাতে বর্তমান দুঃখ-কষ্টের কথা জানান। শহীদ আফিকুল ইসলাম সাদ, রিপন চন্দ্র শীল, সাগর ইসলামসহ ২৪ জনের আত্মত্যাগের গল্প শোনানো হয়। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানে জুলাই-আগস্টের রক্তাক্ত অধ্যায়ের স্মৃতিচারণ করা হয়।
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে তারেক রহমান দাবি করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে বিএনপি তিন মাস আগেই লিখিত প্রস্তাব পেশ করেছে। তিনি স্পষ্ট করেন, “এখন দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে সরকারের। তারা কাদের নিয়ে কী করবেন, তা তাদের সিদ্ধান্ত।” এ প্রসঙ্গে তিনি সতর্ক করেন যে কিছু গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে “নন-ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে” জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
বিচার প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা জোরালো অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন: “ক্ষমতায় গেলে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে দল।” তিনি ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে এনে বর্তমান প্রশাসনে “স্বৈরাচারের ভূত” রয়ে যাওয়ার অভিযোগ তোলেন এবং সতর্ক করেন যে এই শক্তিগুলোই দেশে ষড়যন্ত্রের বীজ বুনছে।
স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রসঙ্গ এনে তারেক রহমান দাবি করেন, “১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, কিন্তু অনেক রাজনৈতিক দল তখন বিদেশে আশ্রয় নিয়েছিল।” তিনি বিএনপিকে “বাংলাদেশের একমাত্র দল” হিসেবে উপস্থাপন করে বললেন, “অন্যান্য দল বিভিন্ন বিদেশি শক্তির গান গায়, আর বিএনপি কেবল বাংলাদেশের জয়গান গায়।”
অনুষ্ঠানের শেষে দেশবাসীর প্রতি তারেক রহমানের আহ্বান জানান: “২০ কোটি মানুষকে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।” তিনি ৩১ দফা সংস্কারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “বাংলাদেশ কোনো দলের একক সম্পত্তি নয়; এ দেশ সবার।” ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।