বাংলাদেশকে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি নতুন সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডাকে সহায়তা করতে চলতি অর্থবছরে এ ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সংস্থাটি।
আজ মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নতুন সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে, গত রোববার বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার ঘোষণা দেয় বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে নীতিনির্ভর ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে ৭৫ কোটি ডলার, যা মূলত বাজেট সহায়তা। বিনিয়োগ ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে ২৫ কোটি ডলার । নীতিনির্ভর ঋণের জন্য বিশ্বব্যাংকের দিক থেকে পাঁচটি ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এসব প্রস্তাবে সমঝোতা হওয়ায় আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ৭৫ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন হতে পারে। বাকি ২৫ কোটি ডলার ঋণের শর্ত নিয়ে এখনও সমঝোতা হয়নি।
আবদুলায়ে সেক জানান, সরকারের সংস্কার, বন্যার প্রতিক্রিয়া, উন্নত বায়ুর গুণমান এবং স্বাস্থ্যের জন্য বিশ্বব্যাংক এই অর্থ বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের নতুন অর্থায়ন জোগাড় করতে পারে।
আবদুলায়ে সেক বলেন, আমরা যত দ্রুত সম্ভব এবং যতটা সম্ভব আপনাকে সমর্থন করতে চাই। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক চাহিদাগুলোতে সহায়তা করতে চায়। এছা্ড়াও নতুন প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি, মাল্টিল্যাটারাল ঋণদাতা প্রায় এক বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত অর্থায়ন করবে যা বিদ্যমান কর্মসূচি থেকে পুনর্বিন্যস্ত করা হবে এবং সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এই অর্থায়ন করা হবে। এই পদক্ষেপটি প্রধান উপদেষ্টার উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি আহ্বানের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি হেডকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাংককে অবশ্যই বাংলাদেশের সংস্কার কার্যক্রমে নমনীয়তা রাখতে হবে এবং ১৫ বছরের চরম দুর্ব্যবস্থাপনার পর একটি নতুন যাত্রা শুরু করতে সহায়তা করতে হবে। এই ধ্বংসস্তূপ থেকে আমাদের নতুন কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। আমি প্রস্তাব করব, আমাদের সাহায্য করুন।’
বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া কোটি কোটি ডলার পুনরুদ্ধারে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা চেয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের কাছে চুরি করা সম্পদ ফিরিয়ে আনার প্রযুক্তি রয়েছে। বাংলাদেশকে শূন্য দুর্নীতি সমৃদ্ধ একটি দেশ গড়তে বিশ্বব্যাংকের দক্ষতা প্রয়োজন হবে।’
পাচার অর্থ ফেরাতে বাংলাদেশকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর। তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাকে সাহায্য করতে পেরে আনন্দিত। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে তথ্যের স্বচ্ছতা, তথ্যের সঠিকতা, কর সংগ্রহের ডিজিটালাইজেশন এবং আর্থিক খাতের সংস্কারে সহায়তা করতে চায়।’
দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কারের এ সুযোগ এসেছে জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘একবার আমরা এটি হারালে, এটি আর কখনো ফিরে আসবে না।’