সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের তীব্র আবাসন সংকট!

bornomalanews
  • Update Time : সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১৯ Time View

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধা না থাকায় শিক্ষাজীবনে নানাবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন তাঁরা। ছাত্রী ভর্তির হার ক্রমাগত বাড়লেও আবাসনের সুবিধা সেই অনুপাতে বাড়েনি। বর্তমানে ৫৭ শতাংশ ছাত্রীকে হলের বাইরে মেস বা আত্মীয়স্বজনের বাসায় থেকে পড়াশোনা চালাতে হচ্ছে। এতে তাঁরা শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থনৈতিক চাপ বহন করতে হচ্ছে।

সংকটের চিত্র ও পরিসংখ্যান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪০,২২৬ জন। এর মধ্যে ২১,৩৮০ জন ছাত্রের জন্য ১৩টি হলে সিট রয়েছে ১৩,৪৯৪টি। বিপরীতে ১৮,৮৪৬ জন ছাত্রীর জন্য ৫টি হলে সিট মাত্র ৪,৮৪৩টি। প্রতি শয্যার বিপরীতে ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ৪ জন, যেখানে ছাত্রদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ১.৫৮। ছাত্রীদের সবচেয়ে বড় হল বেগম রোকেয়া হলে রয়েছে ৫০১টি কক্ষে ২,০০৪টি সিট, যেখানে আবাসিক ও অনাবাসিক মিলিয়ে ৭,২৭৮ জন ছাত্রী অবস্থান করছেন। অন্য হলগুলোতেও প্রায় একই চিত্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, সংকট সমাধানে অস্থায়ীভাবে বাঙ্ক বেড সংযোজন করা হয়েছে। তবে এটি যথেষ্ট নয়। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় দুটি নতুন হল নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা

জান্নাতি ফাহমিদা, তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, হলের সিট না পেয়ে আজিমপুরের একটি মেসে থেকে প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা ভাড়া গুনছেন। তিনি বলেন, “বাইরে থাকলে খাওয়ার সমস্যা, যাতায়াতের সমস্যা, পানির সমস্যা—এসব মিলে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।”

অন্যদিকে, বেগম রোকেয়া হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থী নন্দিনী আহসান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের তরঙ্গ বাস মোহাম্মদপুর পর্যন্ত যায়। সেখান থেকে আরও ৪০ মিনিট যাতায়াতে সময় ও খরচ হয়। এতে ক্লান্তি ও অসুস্থতার সমস্যা লেগেই থাকে।”

প্রশাসনের উদ্যোগ

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাঙ্ক বেডের মাধ্যমে সিট সংখ্যা সাময়িকভাবে বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু এটি সংকটের স্থায়ী সমাধান নয়। সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশা জানিয়েছেন, ছাত্রীদের জন্য দুটি নতুন হল নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি, সংকট সমাধানে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন বৃত্তি চালুর পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী ভর্তির হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৩ সালে এই হার ছিল ৩৮ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে এসে ৫০.৪১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে, সর্বশেষ ২০১২ সালে ছাত্রীদের জন্য কবি সুফিয়া কামাল হল নির্মাণের পর নতুন কোনো হল নির্মাণ হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১১ সাল থেকে শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য ১১টি ভবন নির্মাণ করা হলেও ছাত্রীদের জন্য আবাসনের বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই।

পরামর্শ ও সমাধান

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেছেন, “ছাত্রীদের নিরাপত্তা ও আবাসনের অভাব মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় নিরুৎসাহিত করতে পারে।” তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে নতুন হল নির্মাণের জন্য তহবিল বরাদ্দ এবং অস্থায়ীভাবে ভাড়া বাড়ি নিয়ে আবাসন সুবিধা প্রদানের পরামর্শ দিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য আবাসনের এই সংকট উচ্চশিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থায়ী সমাধানের জন্য নতুন হল নির্মাণ ও সামগ্রিক পরিকল্পনা অত্যাবশ্যক। বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করা, যা তাদের পড়াশোনা ও উন্নত জীবনের পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 bornomalanews24.com
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102