ঢাকা ও নিকটবর্তী এলাকায় দুই দিনের ব্যবধানে চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ প্রবল হয়ে উঠেছে। শুক্রবার সকালে নরসিংদীর মাধবদী এলাকায় রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার এক তীব্র ভূমিকম্পে ১০ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। এই ভূমিকম্পটি স্মরণকালের সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ ঝাঁকুনি সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের অবস্থান ভারত, ইউরেশিয়া ও বার্মা নামক তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে, যেখানে প্লেটগুলো আটকানো অবস্থান থেকে ধীরে ধীরে মুক্ত হচ্ছে। এর ফলে ভূমিকম্পের ভয়াবহ ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে নরসিংদী অঞ্চলকে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহে আরও বেশ কয়েকবার ভূকম্পনের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় একটি নতুন গোপন ভূ-চ্যুতি (ফল্ট) শনাক্ত হয়েছে, যা বাংলাদেশে ৯ মাত্রার একটি মারাত্মক ভূমিকম্পের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা এই ফল্টকে দেশের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের গবেষকরা বিভিন্ন ফাটল থেকে সংগৃহীত মাটির নমুনা পরীক্ষা করে ভূমিকম্পের প্রকৃতি ও গভীরতা নির্ধারণের কাজ করছেন। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের পূর্বাভাস ও প্রস্তুতি গ্রহণে সহায়তা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। টেকনাফ-মিয়ানমার ফল্ট লাইনে ইতিহাসে ভয়াবহ ভূমিকম্প ঘটেছে, যেখানে ১৭৬২ সালে ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ৩ মিটার উঁচুতে উঠে আসে। এই অঞ্চলে এখনো শক্তি সঞ্চয়ের ধারা অব্যাহত রয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্যোগের ইঙ্গিত বহন করে। সুতরাং, বাংলাদেশকে ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবেলায় আরও সতর্ক ও প্রস্তুত থাকতে হবে। বিশেষজ্ঞরা সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ ও জনগণকে সচেতন করার জন্য গুরুত্বারোপ করছেন, যাতে প্রাকৃতিক এ বিপর্যয়ের প্রভাব কমানো যায়।