শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২২ পূর্বাহ্ন

অস্ট্রেলিয়ার সিরিজ জয় হেডের স্পিন ঝলকের পর শর্টের তাণ্ডবে

bornomalanews
  • Update Time : সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৩৫ Time View

আগের দুই ম্যাচের ছন্দ ধরে রেখে আরেকটি বিধ্বংসী ইনিংস খেললেন হ্যারি ব্রুক। বেন ডাকেট উপহার দিলেন দুর্দান্ত সেঞ্চুরি। কিন্তু শক্ত অবস্থানে থেকে ব্যাটিং ধসে সংগ্রহটা বেশি বড় হলো না ইংল্যান্ডের। স্পিনারদের নৈপুণ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর পর ম্যাথু শর্টের ঝড়ো ইনিংসে জিতল অস্ট্রেলিয়া।

বৃষ্টিবিঘ্নিত পঞ্চম ওয়ানডেতে ডাকওয়ার্থ লুইস-স্টার্ন (ডিএলএস) পদ্ধতিতে অস্ট্রেলিয়ার জয় ৪৯ রানে। পাঁচ ম্যাচের সিরিজ তারা জিতল ৩-২ ব্যবধানে।

ব্রিস্টলের কাউন্টি গ্রাউন্ডে রোববার আগে ব্যাটিংয়ে নেমে চার বল বাকি থাকতে ইংল্যান্ড অল আউট হয় ৩০৯ রানে।

স্বাগতিকদের ইনিংসকে ভাগ করা যায় দুই ভাগে। প্রথম ২৫ ওভারে তারা ৩ উইকেটে করে ২০২ রান, পরের ২৪.২ ওভারে ৭ উইকেটে ১০৭!

ওপেনার ডাকেট ৯১ বলে ১৩ চার ও ২ ছক্কায় করেন ১০৭ রান। আগের দুই ম্যাচে ৯৪ বলে অপরাজিত ১১০, ৫৮ বলে ৮৭ রানের পর এবার ৫২ বলে ৭২ রান করেন ব্রুক। ইংল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের ইনিংসটি গড়া ৭ ছক্কা ও ৩ চারে।

অস্ট্রেলিয়ার সফলতম বোলার ট্রাভিস হেড। অষ্টম বোলার হিসেবে বোলিংয়ে এসে প্রথমবার ম্যাচে ৪ উইকেট নেন তিনি ৬.২ ওভারে ২৮ রান দিয়ে।

ওয়ানডে ম্যাচে আটে কিংবা এর পরে বোলিংয়ে এসে তৃতীয় সেরা বোলিং এটি। ২০০৫ সালে ভারতের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার পেসার ফারভিজ মাহারুফ ২০ রানে ও ২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ওমানের বাঁহাতি স্পিনার জিশান মাকসুদ ১৫ রানে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট।

এদিন প্রথম ১৪ বলে ৪২ রান দেওয়ার পরও ঘুরে দাঁড়িয়ে ১০ ওভারে ৭৪ রানে ২ উইকেট নেন লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পা। অফ স্পিনে ৪৯ রানে ২ উইকেট নেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।

অস্ট্রেলিয়ার স্পিনাররা মিলে বোলিং করেন ৩২.২ ওভার, কোনো ওয়ানডেতে দলটির স্পিনারদের যা সর্বোচ্চ। ২০১৯ সালে শারজাহতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ও ২০২২ সালে পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩২ ওভার ছিল অস্ট্রেলিয়ার স্পিনারদের আগের সর্বোচ্চ।

এদিন অস্ট্রেলিয়ার ব্যবহার করা পাঁচ স্পিনারও কোনো ওয়ানডেতে তাদের সর্বোচ্চ।

লক্ষ্য তাড়ায় অস্ট্রেলিয়া ২০.৪ ওভারে ২ উইকেটে ১৬৫ রান করার পর বৃষ্টিতে আর খেলা হয়নি। ডিএলএস পদ্ধতিতে তখন ৪৯ রানে এগিয়ে ছিল সফরকারীরা।

৭ চার ও ৪ ছক্কায় ৩০ বলে ৫৮ রানের ইনিংস খেলেন ওপেনার শর্ট।

বোলিংয়ে ৪ উইকেটের পর ব্যাট হাতে ২৬ বলে ৪ ছক্কা ও ২ চারে ৩১ রান করে ম্যাচের সেরা হেড। সিরিজ সেরার পুরস্কারও জেতেন তিনি।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ফিল সল্ট ও ডাকেটের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় ইংল্যান্ড। প্রথম ওভারে মিচেল স্টার্ককে তিনটি চারে ডানা মেলে দেন সল্ট। সপ্তম ওভারে অ্যারন হার্ডিকে টানা দুই ছক্কার পর একটি চার মারেন তিনি।

ওই ওভারেই ক্যাচ দিয়ে শেষ হয়ে সল্টের ২৭ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় গড়া ৪৫ রানের ইনিংস। উদ্বোধনী জুটিতে ৫৮ রান আসে ৪২ বলে।

তিনে নেমে হার্ডির পরের ওভারে শূন্য রানে বিদায় নেন উইল জ্যাকস। পাওয়ার প্লেতে ইংল্যান্ড করে ২ উইকেটে ৭৩ রান।

ব্রুক শুরুতে সময় নেন কিছুটা। প্রথম ২০ বলে তার রান ছিল ৯। এরপর জ্যাম্পাকে পরপর চার ও ছক্কায় রানের গতিতে দম দেন তিনি। জ্যাম্পার পরের ওভারে মারেন তিনটি ছক্কা।

ডাকেট ফিফটি করেন ৪৫ বলে। ব্রুক পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলেন ৩৯ বলেই।

ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হিসেবে ব্রুকের (৩) চেয়ে বেশি ম্যাচে টানা পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলতে পেরেছেন কেবল স্যার অ্যালেস্টার কুক ও ওয়েন মর্গ্যান, দুজনই ৪ ম্যাচে।

ব্রুককে থামান জ্যাম্পা। সিরিজে ৫ ম্যাচে তার মোট রান হলো ৩১২। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজে কোনো অধিনায়কের যা সর্বোচ্চ। ২০১৯ সালে ঘরের মাঠে ৫ ম্যাচের সিরিজে ভিরাট কোহলির ৩১০ রান ছিল আগের সর্বোচ্চ।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজে ইংল্যান্ডের হয়ে ব্রুকের চেয়ে বেশি রান করতে পেরেছেন কেবল আর একজন, ২০১০-১১ মৌসুমে ৭ ম্যাচের সিরিজে ৩৭৫ রান করেছিলেন জোনাথান ট্রট।

ব্রুকের বিদায়ে ৯৮ বলে ১৩২ রানের জুটি ভাঙার পরই ইংল্যান্ডের ছন্দপতনের শুরু। আগের ম্যাচে ২৭ বলে অপরাজিত ৬২ রান করা লিয়াম লিভিংস্টোন এবার ফেরেন শূন্য রানে। টিকতে পারেননি জেমি স্মিথও।

ডাকেট সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৮৬ বলে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দুটি সেঞ্চুরিই করলেন তিনি একই মাঠে। গত বছর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি ৭৮ বলে অপরাজিত ১০৭ রান করার পর বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল ম্যাচ।

সেঞ্চুরির পর ইনিংস টেনে নিতে পারেননি ডাকেট। প্রথমবার আক্রমণে এসে একটি ছক্কা হজমের পর তাকে বিদায় করেন হেড। নিজের তৃতীয় ও চতুর্থ ওভারে তিনি ফিরিয়ে দেন জেকব বেথেল ও ব্রাইডন কার্সকে।

টেকেননি ম্যাথু পটসও। একটা পর্যায়ে ২ উইকেটে ২০২ থেকে ইংল্যান্ডের স্কোর হয়ে যায় ৯ উইকেটে ২৭৬! সেখান থেকে আদিল রাশিদের ৩৫ বলে ৩৬ রানের সুবাদে তিনশ ছাড়াতে পারে তারা।

বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল আগে থেকেই। তা মাথায় রেখেই হয়তো রান তাড়ায় আগ্রাসী শুরু করেন শর্ট। পটসের পরপর দুই ওভার মিলিয়ে তিনি মারেন ৪টি চার ও একটি ছক্কা। প্রথম ১৭ বলে ১১ রান করার পর জ্যাকসের একই ওভারে দুটি করে চার ও ছক্কায় ২০ রান নেন হেড।

প্রথম ৭ ওভারে অস্ট্রেলিয়া তুলে ফেলে ৭৮ রান। পরের ওভারে আক্রমণে এসে হেডকে ফেরান কার্স।

তাণ্ডব অব্যাহত রেখে শর্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে ফিফটি পূর্ণ করেন স্রেফ ২৩ বলে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই সংস্করণে দ্রুততম ফিফটি এটিই। ২০১৫ সালে পার্থে ২৪ বলে ফিফটি করেছিলেন জেমস ফকনার।

প্রথম ১০ ওভারে অস্ট্রেলিয়া করে ১ উইকেটে ১০৩ রান। ফিফটির পর বেশিদূর যেতে পারেননি শর্ট। দলকে এগিয়ে নেন স্টিভেন স্মিথ ও জশ ইংলিস।

ওয়ানডে ম্যাচের ফল পাওয়ার জন্য দুই ইনিংসেই ন্যূনতম ২০ ওভার খেলা হওয়া বাধ্যতামূলক। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের ২১তম ওভারে প্রথম চার বলের পরই।

মিচেল মার্শের অনুপস্থিতিতে এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দেওয়া স্মিথ ৪৮ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ৩৬ রানে। ২০ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ২৮ রান করেন ইংলিস।

সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। পরের দুটি জিতে সমতা ফেরায় ইংল্যান্ড। শেষটিতে পেরে উঠল না তারা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড: ৪৯.২ ওভারে ৩০৯ (সল্ট ৪৫, ডাকেট ১০৭, জ্যাকস ০, ব্রুক ৭২, স্মিথ ৬, লিভিংস্টোন ০, বেথেল ১৩, কার্স ৯, রাশিদ ৩৬, পটস ৬, স্টোন ৯*; স্টার্ক ৬-০-৪৭-০, হেইজেলউড ৬-১-৩৩-০, হার্ডি ৫-১-৩৮-২, জ্যাম্পা ১০-০-৭৪-২, ম্যাক্সওয়েল ১০-০-৪৯-২, কোনোলি ৪-০-৩১-০, শর্ট ২-০-৬-০, হেড ৬.২-০-২৮-৪)

অস্ট্রেলিয়া: ২০.৪ ওভারে ১৬৫/২ (শর্ট ৫৮, হেড ৩১, স্মিথ ৩৬*, ইংলিস ২৮*; পটস ৭-০-৪৯-১, স্টোন ৪-০-৩৬-০, জ্যাকস ১-০-২০-০, কার্স ৫-০-৩৬-১, রাশিদ ৩.৪-০-১৫-০)

ফল: ডিএলএস পদ্ধতিতে অস্ট্রেলিয়া ৪৯ রানে জয়ী

সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজ ৩-২ ব্যবধানে জয়ী অস্ট্রেলিয়া

ম্যান অব দা ম্যাচ: ট্রাভিস হেড

ম্যান অব দা সিরিজ: ট্রাভিস হেড

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 bornomalanews24.com
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102