পলিথিনের বিকল্প সত্যিকারের পরিবেশবান্ধব ব্যাগের সরবরাহ এখনও অপ্রতুল। খুব দ্রুত সরবরাহ বাড়িয়ে ফেলা যাবে, সেই সম্ভাবনাও কম।
রাজধানীর মধুবাজার এলাকায় মুদি দোকানে সদাই কিনতে আসা এক নারী তার দরকারি পণ্যের ফর্দের সঙ্গে দোকানিকে এগিয়ে দিলেন কাপড়ের ব্যাগ; পলিথিনের শপিং ব্যাগ দিতে নিষেধ করলেন।
তার প্রশংসা করে দোকানি হালিম রহমান বললেন, “আপাই তো ঠিক কাজ করছেন। আপনার মত সচেতন সবার হওয়া উচিত। কালকে থেকে পলি ব্যাগ বন্ধ, আপনার মত ব্যাগ নিয়ে বাজারে আসতে হবে। পলিথিন চাইলেও দিতে পারব না, দোকানে রাখলেই জরিমানা।”
মোহাম্মদপুরের টাউন হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজারে মাছ বিক্রেতা সবুজ শেখের কথাতেও মিলল একই সুর, যদিও তার কারণ ভিন্ন।
“পলিথিন বন্ধ হইলে তো ভালই হইব। আমগো প্রতিদিন কয়েক হাজার টাকার পলিথিন কিনন লাগে। মানুষত তো বাজারে আইসা পলি ফ্রি পাইত। এই ব্যাগ বন্ধ হইলে আমাগো খরচ কমব।”
নভেম্বরের প্রথম দিন থেকে বাজারে গিয়ে সদাই কেনার পর আর পলিথিন বা টিস্যু ব্যাগ মিলবে না, এ বিষয়ে শহুরে ক্রেতাদের একটি অংশ সচেতন। পলিথিন আর একবার ব্যবহারের প্লাস্টিক পণ্যের বিপদ সম্পর্কে তারা জানেন, এসব সামগ্রীর ব্যবহার যে পুরোপুরি বন্ধ হওয়া দরকার সেটাও মানেন।
অনেকে আবার সেসব নিয়ে অতটা মাথা ঘামাতে চান না। পলি ব্যাগের সহজ জীবন কঠিন হয়ে উঠবে, তা মানতে তাদের অস্বস্তি। পলিথিন না থাকলে রান্নাঘরের প্রতিদিনের ময়লা ফেলার উপায় কী হবে, সেটাও ভাবছেন কেউ কেউ।
ভাবার বিষয় আরো আছে। গত এক সপ্তাহে বাজার ঘুরে আর বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেছে, পলিথিনের বিকল্প সত্যিকারের পরিবেশবান্ধব ব্যাগের সরবরাহ এখনও অপ্রতুল। খুব দ্রুত সরবরাহ বাড়িয়ে ফেলা যাবে, সেই সম্ভাবনাও কম।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অবশ্য বলেছেন, পলিথিন ও পলিপ্রপাইলিনের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে ‘পর্যাপ্ত সময়’ দেওয়া হয়েছে। আর সরকারও বিকল্প সরবরাহের জন্য কাজ করছে।
কী হবে শুক্রবার থেকে?
বাংলাদেশে আইন করে সাধারণ পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেই ২০০২ সালে। সে আইন কেবল কিতাবেই থেকে গেছে। বরং পলিথিনের অতি ব্যবহার পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পলিথিনের শপিং ব্যাগ পচনশীল নয়। পলিথিনের স্তূপ নালায় আটকে থাকায় পানি নিষ্কাষণেও বাধা তৈরি হয়। সে কারণে বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা এক সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
গত ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা পলিথিন নিষিদ্ধের আইনের কঠোরভাবে প্রয়োগের ঘোষণা দেন। এর অংশ হিসেবে গত ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে এই ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। আর ১ নভেম্বর শুক্রবার থেকে কাঁচা বাজারেও পলিথিন ও পলিপ্রপাইলিনের ব্যাগ (টিস্যু ব্যাগ) ব্যবহার করা যাবে না।
এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে কাঁচাবাজারগুলোতে চালানো হবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। পাশাপাশি অভিযান চলবে অবৈধভাবে পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানাগুলোতেও।
আইন বলছে, পলিথিন বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের দায়ে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে দুই থেকে দশ বছরের কারাদণ্ড, দুই লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে।
সুপারশপে পলিথিন ও পলিপ্রপাইলিনের ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধের সময়েই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, এক মাস পর থেকে আর কোনো ‘আলাপ-আলোচনার সুযোগ’ থাকবে না। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য কারখানায় অভিযান চলবে।
তবে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এও বলেছিলেন, “সতর্ক করা এবং কঠোর হওয়ার সময় পার হয়ে গেছে। অভিযানে কঠিন শাস্তি ও জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে শাস্তি দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়। ক্ষতিকর এই ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। আশা করি অভিযান চালিয়ে শাস্তি দেওয়ার দরকার হবে না। এই ঘোষণাতেই সচেতনতা তৈরি হবে।”
অভিযানে সরকার কতটা কঠোর হবে, সেই প্রশ্নে অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মন্ত্রণালয় থেকে অভিযান মনিটর করা হবে। এ বিষয়টি পরিচালনা করা হবে অধিদপ্তর থেকে। তবে মোবাইল কোর্টের নিদিষ্ট নিয়ম রয়েছে তা মেনেই অভিযান পরিচালনা করা হবে।”
বাজার কতটা প্রস্তুত?
সরকার আগে সুপারশপে পলিথিন ও পলিপ্রপাইলিনের ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে। কারণ তাতে পর্যবেক্ষণ করা সহজ হবে এবং বড় পরিসরে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে ‘ঘাটতি পূরণের সুযোগ’ মিলবে।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেছিলেন, “ঢাকা শহরে নিদিষ্ট সংখ্যার সুপারশপে এই সিদ্ধান্ত কতটুকু কাজ করল তা সহজেই বোঝা যাবে। এখানে কোনো ভুল থাকলে আগামী ১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারগুলোতে আইনের প্রয়োগের আগে সে ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার সুযোগ থাকবে।”
২০২৩ সালে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, কেবল ঢাকা শহরে প্রতিদিন আড়াই কোটির বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয়। ঢাকায় এক একটি পরিবার প্রতিদিন গড়ে পাঁচটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে। দেশে প্রতিদিন ৩৫ লাখের বেশি টিস্যু ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাত হয়। এসব ব্যাগ কৃত্রিম তন্তু দিয়ে তৈরি হলেও কাপড়ের ব্যাগ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেছিলেন, পলিথিন ও টিস্যু ব্যাগ বন্ধের পর যেন বিকল্প ব্যাগের চাহিদা অনুযায়ী যোগান দেওয়া যায়, সেজন্য বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনসহ ২০-২৫টি প্রতিষ্ঠান পাট, কাপড় ও কাগজের ব্যাগ সরবরাহ করবে। এমনকি জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের (জেডিপিসি) তরফ থেকে প্রায় এক মাস আগে জানানো হয়েছিল, বিভিন্ন সুপারশপ ও নানা কোম্পানি থেকে এক কোটি ব্যাগের অর্ডার তারা পেয়েছে।
সুপারশপে পলিথিন নিষিদ্ধ হওয়ার পর পর্যাপ্ত বিকল্প ব্যাগের সরবরাহ মিলেছে কি না, তা জানার চেষ্টা করেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
চেইন শপ স্বপ্নর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাব্বির হাসান নাসির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিদিন আমাদের প্রায় এক লাখ ব্যাগের প্রয়োজন হয়, সেই হিসেবে মাসে ত্রিশ লাখ। সেই চাহিদার এক থেকে দুই শতাংশ এখন পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে।”
চাহিদা পূরণ করার জন্য ছোট বড় বিভিন্ন সাপ্লায়ার ও পাটকলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানান স্বপ্নের এই কর্মকর্তা।
তিনি করেন, “আমাদের দেশের পাটকল সাধারণত চট তৈরি করে, কিন্তু চট থেকে ব্যাগ তৈরির ইন্ডাস্ট্রি সেভাবে ডেভলপ করেনি। এগুলো ডেভলপ হলে আমরা আমাদের চাহিদা পূরণ করতে পারব। আমার ধারণা, আগামি জানুয়ারী নাগাদ আমাদের চাহিদা অনুযায়ী পাটের ব্যাগের যোগান পাওয়া সম্ভব হবে।”
বড় পরিসরে পলিথিন বন্ধের আগে সরকারের প্রস্তুতি, বিকল্প ব্যাগের চাহিদা ও যোগান নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের উত্তরে অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, “বিকল্প আর কী কী হতে পারে তা নিয়ে কাজ চলছে। সামনের দিনে আরও বিকল্প আসবে। তখন চাহিদা অনুযায়ী যোগান আরো বাড়বে।
“তবে এক দিনে তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন আসবে। কোন পরিবর্তন হয়নি এমন তো নয়, বরং গত এক মাসে আমরা ইতিবাচক অনেক প্রতিক্রিয়া পেয়েছি।”
এদিকে চাহিদা বাড়ায় উদ্যোক্তারা হঠাৎ করে পাটের ও চটের ব্যাগের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কয়েকটি সুপারশপের কর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে ২১ অক্টোবর পরিবেশ অধিদপ্তরের সভাকক্ষে ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় সভাতেও আলোচনা হয়।পরিবেশ উপদেষ্টা সেই সভায় বলেন, “সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ বন্ধের পর ক্রেতারাই তা নিতে চাচ্ছেন না । কিন্তু দোকানিরা একটি করে পাটের ব্যাগ বেশি দাম দিয়ে বিক্রি করছে, দোকানিরা বলার চেষ্টা করছে পাটজাত পণ্যের উদ্যোক্তারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এটাই তো আমার দেশ। আমরা তো ভিন্ন কোনো দেশে বসবাস করি না। যাই হোক, পলিথিনের বিকল্প আমরা পাট ও চট এটা দিয়েই করব। এতে আমাদের দেশীয় শিল্প উঠে আসবে।”
দামের বিষয়টি নিয়ে অন্যভাবে ভাবার কথা বললেন জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য কোম্পানি ডিজাইন বাই রুবিনার ব্র্যান্ড ম্যানেজার নাজমুল হাসান।
তিনি বলেন, “অনেকেই মনে করেন পাট খুব সস্তা জিনিস, ৫ টাকা ১০ টাকায় পাওয়া যাবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আসা ক্রেতাদের এমন ভুল ধারণা থেকে বের হতে হবে। কম দামে পলিথিন কিনে তা একবারের বেশি ব্যবহার করা যায় না। অন্যদিকে ৫০ টাকার একটি পাটের ব্যাগ ২/৩ মাস ধুয়ে ব্যবহার করা যায়। এভাবে হিসাব করলে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের লাভ বোঝা যাবে।”
বাজারে যে পরিমাণ পাট আছে, তাতে চাহিদা পূরণ সম্ভব বলে মনে করেন এই উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, “চাহিদা বাড়লে পাটের ব্যাগের দাম আরো কমবে। এছাড়া বেশি ব্যবহার হলে বিভিন্ন রকম ব্যাগের উদ্ভাবনও হবে।”
১ নভেম্বর থেকে পলিথিনের বিরুদ্ধে অভিযানে নামছে সরকার। দোকানে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পাট ও চটের ব্যাগ রাখার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে কারওয়ান বাজার পাইকারি কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুজন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবারই দেশের আইন মেনে ও পরিবেশ রক্ষা করে ব্যবসা করতে হবে। এর জন্য ব্যবসায়ীদের ৫/১০ টাকা বেশি দিয়ে পাট ও চটের ব্যাগ দোকানে রাখতে হবে অথবা ক্রেতাদের সঙ্গে করে ব্যাগ আনতে হবে। সবার মিলিত সিদ্ধান্তই আসলে মোদ্দা কথা।”
সুপারশপের অভিজ্ঞতা কী
বেশির ভাগ সুপারশপ গত এক মাসে পলিথিনের ব্যবহার শতভাগ বন্ধ করতে পারেনি। স্বপ্ন ও মিনা বাজারে পাটের ব্যাগের সরবারহ না থাকায় নেটের ব্যাগ, প্লাস্টিকের বাজারের ব্যাগ, প্লাস্টিকের র্যাপিং ও ফোম ট্রে ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
ইউনিমার্ট, মিনা বাজার ও স্বপ্নের মত বড় চেইনগুলোতে কাঁচা মাছ, মাংস, ফল, গুড়, সবজি ঢেকে রাখতেও পলিথিন ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
ইউনিমার্টের ধানমন্ডি আউটলেটের মাংস বিভাগে বেঙ্গল মিটের মাংস বিক্রি করে। সেখানে পলিথিন মোড়ানো ও ফোমের এক ধরনের ট্রেতে মাংস দেওয়া হচ্ছিল, যা পানিরোধক।
এটি পরিবেশবান্ধব কি না জানতে চাইলে বেঙ্গল মিটের ইনচার্জ নেহাল উদ্দিন বলেছিলেন, “আমাদের লাইসেন্স আছে। এগুলো ফুডগ্রেড। এটি ক্ষতিকর নয়। আমরা শুরু থেকেই ক্রেতাদের এতে করে মাংস দিয়ে আসছি।”
এ কর্মকর্তার দেখানো লাইসেন্সে ফোমের ট্রে তৈরির উপাদান লেখা হয়েছে ‘পলিস্টাইরিন’, যা একটি সিন্থেটিক প্লাস্টিক (পলিমার)।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ধানমন্ডিতে মীনা বাজারের অপারেশনস ও আউটলেট ইনচার্জ পারভেজ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রথম তিন দিন কোনো পলিথিন ব্যবহার করিনি। কিন্তু তাতে সব নষ্ট হয়ে যায়। মাছি ও পোকা ওড়ে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ক্রেতারা এমন খাবার কিনতে চায় না। তাই পলিথিন র্যাপ ব্যবহার করছি।”
বিকল্প কী
পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ নিয়ে বহুদিন থেকেই চলছে আলোচনা। যদিও এ ব্যাগ বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসতে পারেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ বলেছিলেন, “সোনালি ব্যাগ নিয়ে সরকারের সঙ্গে উদ্ভাবক মোবারক আহমদ খানের আলোচনা হয়েছে। ব্যাগটির কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এ বিষয়ে অনুমতি পেলেই পাইলটিং চালু হবে। বর্তমান যে সোনালী ব্যাগ দেখা যাচ্ছে, তা ল্যাবে উৎপাদিত। এই ব্যাগ বাজারে বিক্রি বা বাণিজ্যিক উৎপাদন করার অনুমতি এখনো নেই।”
সোনালি ব্যাগ নিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা রেজওয়ানা হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমেকে বলেছিলেন, “পলিথিনের বিকল্প সব সময়ই ছিল। পাট, চট ও কাপড়ের ব্যাগকেই এই মুহূর্তে প্রাধান্য দেওয়া হবে। প্লাস্টিক বা পলিথিনের মত দেখতে পচনশীল ব্যাগকেও বিকল্প হিসেবে আপাতত ভাবা হচ্ছে না।”
সুপারশপে পলিথিন ব্যাবহার বন্ধের পর বিকল্প হিসেবে মোমের প্রলেপ দেওয়া কাগজের ব্যাগ, ব্রাউন ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ, পাটের ব্যাগ রাখতে দেখা গেছে।
এছাড়া তুলা, উল, বেত, সুপারির খোল দিয়ে তৈরি বিভিন্ন বিকল্প ব্যাগের কথা সরকারিভাবে বলা হলেও তা সুপারশপগুলোতে দেখা যায়নি।
মিনা বাজারে ১৩ থেকে ২০ টাকায় চার আকারের ব্যাগ রাখা হয়েছে। স্বপ্নে ব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে ৬ থেকে ১৪ টাকার মধ্যে। ইউনিমার্টে কম দামের পাটের ব্যাগের দামই ২৯ টাকা এবং মাঝারি আকারেরগুলো ১৪৫ এবং বড় ও ভালোগুলোর দাম ৪৫০ টাকা।
ব্যাগের সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে ক্রেতা ও দোকানিদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। আয়শা খানম নামের এক ক্রেতা বলেছেন, “কাগজের ব্যাগে কাঁচা মাছ, মাংস বেশি দূর নেওয়া যায় না। তবে একবার ব্যাগ কিনলে বারবার ব্যবহার করা যার এটা ভাল দিক।”
তবে সুপারশপ থেকে বলা হচ্ছে কোনো ক্রেতা ৭০/৮০ হাজার টাকার কেনাকাটা করলে তাকে ব্যাগই কিনতে হয় কয়েক হাজার টাকার। এ নিয়ে অনেক ক্রেতাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।