বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৮ পূর্বাহ্ন

সমতায় বাংলাদেশ শান্তর লড়াই আর জাকের-নাসুমের ছোঁয়ায়

bornomalanews
  • Update Time : শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৭ Time View

একই উইকেটে ম্যাচ। ম্যাচের চিত্রও প্রায় একইরকম। শুধু বদলে গেল দুই দলের অবস্থান। শারজাহতে দিন আর রাতের পার্থক্য প্রথম ম্যাচে টের পেয়েছিল বাংলাদেশ, এবার সেই তেতো অভিজ্ঞতা হলো আফগানিস্তানের। সিরিজেও তাই ফিরে এলো সমতা।

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আফগানিস্তানকে ৬৮ রানে হারিয়ে সিরিজ জিইয়ে রাখল বাংলাদেশ।

১১৯ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা নাজমুল হাসান শান্ত। দলের জয়ের ভিত অধিনায়কের হাতেই গড়া। তবে একাদশে যে দুটি পরিবর্তন এ দিন আনে বাংলাদেশ, মহামূল্য ভূমিকা রাখেন সেই দুজনও।

এক বছর পর বাংলাদেশের জার্সিতে নেমে ২৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলার পাশাপাশি তিন উইকেট শিকার করেন নাসুম আহমেদ। ম্যাচ-সেরা হতে পারতেন তিনিও। ওয়ানডে অভিষেকে তিন ছক্কায় ২৭ বলে অপরাজিত ৩৭ রান করেন জাকের আলি। তার ওই শেষের ঝড়েই বাংলাদেশ ৫০ ওভারে করতে পারে ২৫২ রান।

শারজাহতে পরে ব্যাট করে এই রান তাড়া করা ভীষণ কঠিন। আফগানিস্তানও তা পারেনি। ৩৯ বল বাকি থাকতে তাদের ইনিংস শেষ হয় ১৮৪ রানে।

প্রথম ম্যাচে ২ উইকেটে ১২০ রান থেকে ভয়াবহ ধসে ভেঙে পড়েছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং। এবার আফগানিস্তানের রানও ছিল এক পর্যায়ে ২ উইকেট ১১৮। তার পরই তাদের উল্টো যাত্রার শুরু। বাংলাদেশের মতো ২৩ রানের মধ্যে ৮ উইকেট তারা হারায়নি। তবে এক রানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে পথচ্যুত হয় রান তাড়া। পরে ২১ রানের মধ্যে পতন হয় শেষ পাঁচ উইকেটের।প্রথম ম্যাচে ছয় উইকেট শিকার আল্লাহ মোহাম্মদ গাজানফার এ দিন আগে বোলিং করেও বেশ ভালো পারফর্ম করেছেন (১০-০-৩৫-২)। তবে ম্যাচের ভাগ্য লেখা হয়ে যায় হয়তো ম্যাচ শুরুর আধঘণ্টা আগেই। টস ভাগ্যকে যে এবার পাশে পায় বাংলাদেশ!

আগের ম্যাচের ব্যাটিং ধসকে পেছনে ফেলার বিশ্বাস দলকে এনে দেন তানজিদ হাসান। ফাজালহাক ফারুকির দুই ওভারে তিন বাউন্ডারির পর গাজানফারের ফুল টসকে ছক্কায় উড়িয়ে তিনি। পরের বলেই পুনরাবৃত্তির চেষ্টায় শেষ হয় তার ইনিংস (১৭ বলে ২২)।

শান্ত ক্রিজে গিয়ে সেই গতি ধরে রাখার চেষ্টা করেন। সৌম্য সরকারের শুরুটা ছিল সাবধানী। ৮ ওভার শেষে তার রান ছিল ১৭ বলে ৬। পরে মোহাম্মদ নাবির ওভারে চার ও চোখধাঁধানো এক ছক্কায় তিনিও ছন্দের ফেরার ইঙ্গিত দেন। পরে আজমাতউল্লাহ ওমারজাইয়ের শর্ট পিচ বল আছড়ে ফেলেন তিনি স্টেডিয়ামের বাইরে।

দুজনের এই জুটি থামে ৭১ রানে। সৌম্যকে বিদায় করে দেন রাশিদ খান। তবে ৩৫ রানের ইনিংসটি লম্বা হতো পারত আরও, যদি তিনি রিভিউ নিতেন। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, রাশিদ খানের বল পিচ করেছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে।

সৌম্যর বিদায়ের পর অনেকটাই খোলসে ঢুকে যান শান্ত। উইকেট ধরে রাখতে সাবধানী ব্যাটিংয়ের পথ বেছে নেন তিনি।

মেহেদী হাসান মিরাজও ঝুঁকি না নিয়ে এক-দুই রান করে নিয়ে ইনিংস গড়ায় মন দেন। তাতে আরেকটি অর্ধশত রানের জুটি গড়ে ওঠে।

রাশিদের দুর্দান্ত এক গুগলিতে মিরাজ বোল্ড হলে ভাঙে এই জুটি।

শান্ত প্রথম ৩৫ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় করেন ৩০ রান। সেখান থেকে পঞ্চাশে পা রাখেন ৭৫ বলে।

কিন্তু একটি মিনি-ধসে এলোমেলো হয়ে যায় গোছানো ইনিংস। ১০ রানের মধ্যে পড়ে যায় তিন উইকেট। তিনটিই নানগেলিয়া খারোটেকে ব্যাটসম্যানদের উপহার।

স্লগ সুইপে বিদায় নেন হৃদয়। ৪০ ওভার শেষ হতেই হুট করে ধৈর্য হারিয়ে ছক্কার চেষ্টায় সীমানা ধরা পড়েন শান্ত।

দুই বল পরই আবার ছক্কা মারতে গিয়ে উইকেট হারান মাহমুদউল্লাহ। সবশেষ চার ওয়ানডেতে ৩৮ বছর বয়সী ক্রিকেটারের রান ০, ১, ২, ৩!

বাংলাদেশের তখন ২২০-২৩০ রানে। কিন্তু জাকের-নাসুমের হাত ধরে দল পেয়ে গেল আরও বেশি কিছু।

৪১ বলে ৪৬ রানের জুটি গড়েন দুজন। ম্যাচের প্রেক্ষাপটে যে জুটির ভূমিকা বিশাল।

দুই ছক্কায় ২৫ করে নাসুম আউট হন। ইনিংসের শেষ বলে ছক্কায় দলের রান আড়াইশ পার করান জাকের।

শেষ চার ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৪৭ রান।

মোমেন্টাম, পুঁজি, পরিস্থিতি, সবই ছিল বাংলাদেশের পক্ষে। প্রথম উইকেটও দ্রুতই ধরা দেয়। আগের ম্যাচের মতোই রাহমানউল্লাহ গুরবাজকে দ্রুত ফেরান তাসকিন আহমেদ।

তবে দ্বিতীয় উইকেটে সেদিকউল্লাহ আটাল ও রেহমাত শাহ গড়েন ৫২ রানের জুটি।

নাসুম বল হাতে নিয়েই ভাঙেন এই জুটি। দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে উইকেটটি অবশ্য দাবি করতে পারেন মিরাজও!

রেহমাত ও হাশমাতউল্লাহ শাহিদি আরেকটি জুটি গড়ে তুলেছিলেন। তবে এই জুটির অর্ধশত হওয়ার আগেই ফেরেন শাহিদি। ওমারজাইকে প্রথম বলেই বোল্ড করে দেন নাসুম। ৫২ করে রেহমাত রান আউট গুলবাদিন নাইবের সঙ্গে কেই প্রান্তে চলে গিয়ে।

ম্যাচের ফল আসলে অনেকটা নির্ধারিত হয়ে যায় সেখানেই। এরপর নাইব একটু পাল্টা আক্রমণ করেছিলেন বটে। তবে ২৫ রানেই থামে তার সেই চেষ্টা। আগের ম্যাচে দুর্দান্ত ইনিংস খেলা নাবিকে দারুণ এক টার্নিং বলে বোল্ড করে দেন মিরাজ। ম্যাচ শেষ হতেও এরপর আর বেশি সময় লাগেনি।

ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পেয়ে অনেকটা সময় মাঠের বাইরে ছিলেন শান্ত। অধিনায়কের মুখে হাসি ফোটান সতীর্থরা।

শারজাহতে সাত ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশের প্রথম জয় এটি। দ্বিতীয় জয়টি পেয়ে সিরিজ জয়ের আশায় তারা মাঠে নামবেন সোমবার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৫২/৭ (তানজিদ ২২, সৌম্য ৩৫, শান্ত ৭৬, মিরাজ ২২, হৃদয় ১১, মাহমুদউল্লাহ ৩, জাকের ৩৭*, নাসুম ২৫, তাসকিন ২*; ফারুকি ৭-০-৬৯-০, গাজানফার ১০-০-৩৫-২, নাবি ১০-০-৪৯-০, নাইব ২-০-১০-০, ওমারজাই ৩-০-২৩-০, রাশিদ ১০-০-৩২-২, খারোটে ৮-০-২৮-৩)।

আফগানিস্তান: ৪৩.৩ ওভারে ১৮৪ (গুরবাজ ২, আটাল ৩৯, রেহমাত ৫২, শাহিদি ১৭, ওমারজাই ০, নাইব ২৬, নাবি ১৭, রাশিদ ১৪, খারোটে ৪, গাজানফার ; শরিফুল ৮-০-৪৫-০, তাসকিন ৬-১-২৯-১, মিরাজ ১০-১-৩৭-৩, মুস্তাফিজ ৮-০-৩৭-২, নাসুম ৮.৩-১-২৮-৩, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-৭-০)।

ফল: বাংলাদেশ ৬৮ রানে জয়ী।

সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজের দুটি শেষে ১-১ সমতা।

ম্যান অব দা ম্যাচ: নাজমুল হোসেন শান্ত।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 bornomalanews24.com
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102