এস আলম গ্রুপের শেয়ার বিক্রি করে ইসলামী ব্যাংক ১০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, নতুন পর্ষদের পরিকল্পনায় ইসলামী ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে।
ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, “এস আলম ইসলামী ব্যাংকের ১৭টি শাখা থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। শুধু টাকা নেয়নি, আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ব্যাংকের যে সম্পর্ক ছিল, সেটাও ধ্বংস করে দিয়েছে।
“পাশাপাশি পুরোনো উদ্যোক্তা সৌদি প্রতিষ্ঠান আল রাজিকে আনার চেষ্টা চলছে। আইএফসিকেও যুক্ত করার চেষ্টা করা হবে।”
গত তিন মাসে ইসলামী ব্যাংকে ৪ হাজার ৯৭২ কোটি টাকার আমানত ফেরত এসেছে বলে তথ্য দেন চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ব্যাংক বর্তমানে নতুন ঋণ দেওয়া বন্ধ রেখেছে। চারটি অডিট ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের সামগ্রিক আর্থিক অবস্থা পর্যালোচনা করছে ফার্মগুলো।
“ইসলামী ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। তাছাড়া ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ ২০১৭ সালে ‘জোরজবরদস্তি’ করে ইসলামী ব্যাংকের কর্তৃত্ব নেয়। তারপর নামে বেনামে ব্যাংক থেকে ঋণ বের করে নেয় গ্রুপটি। তাতে এক সময় আমানতের দিক দিয়ে শীর্ষে থাকা ব্যাংটির দ্রুত অবনতি ঘটে।
এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগে বিদেশিদের শেয়ার ছিল ৫২ শতাংশের মত, যা এখন ১৩ শতাংশে নেমে এসেছে।
ধীরে ধীরে শেয়ার ছেড়ে দিয়েছে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি), দুবাই ইসলামী ব্যাংক, আল-রাজি গ্রুপ, কুয়েতের সরকারি ব্যাংক কুয়েত ফাইন্যান্স হাউস, সৌদি কোম্পানি আরবসাস ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিস্ট এজেন্সিসহ বেশির ভাগ উদ্যোক্তা ও সাধারণ শেয়ারধারী প্রতিষ্ঠান।
ইবনে সিনা, ইসলামিক সেন্টারও ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ছেড়ে দেয়।
৫ অগাস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর ইসলামী ব্যাংকেও ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন পর্ষদ গঠন করে দিলে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয় ইসলামী ব্যাংক।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে এই সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের পর ইসলামী ব্যাংক থেকে ‘৮০% ঋণ নিয়েছে’ এস আলম।।
নতুন বোর্ড ‘স্বচ্ছতার সঙ্গে’ কাজ করছে মন্তব্য করে গভর্নর বলেন, তারল্য ঘাটতিতে পড়া ইসলামী ব্যাংক ইতিবাচক ধারায় ফিরছে।
“২০১৭ সাল থেকে ইসলামী ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ৮০ শতাংশ ঋণ এস আলম নিয়েছে। এটা যে বিশাল ক্ষতি তা একদিনে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না। নতুন বোর্ড দেওয়ায় তারা আবার পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করছে। এতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।”
গভর্নর বলেন, অযোগ্য ব্যক্তিদের আর প্রতিষ্ঠানে রাখা যাবে না। যারা নিজের স্বার্থে কাজ করছে, তাদের রাখা যাবে না।
“কিন্তু যারা যোগ্য ব্যক্তি, নিঃস্বার্থভাবে প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করবেন, কেন তারা থাকবেন না? যারা অভিজ্ঞ, তারা এসব প্রতিষ্ঠানে থাকতেই পারেন। ঢালাওভাবে কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না। ইসলামী ব্যাংকে কারা থাকবেন কিংবা কারা থাকবেন না, সে বিষয়গুলো বোর্ড থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর বোর্ডে যাদের দেওয়া হয়েছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকিং খাত বিষয়ক অভিজ্ঞ কর্মী হিসাবেও কাজ করছেন।”
আহসান এইচ মনসুর বলেন, “দুর্বল ব্যাংকগুলোকে বাঁচানোর জন্য নতুন কৌশল নেওয়া হবে। তবে এসব কৌশল কি তা এখনি বলব না। সামনে তা জানানো হবে। ডিপোজিটরদের স্বার্থ রক্ষা করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য ।
“আগের মত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশকে সহায়তা করা হচ্ছে না। নতুন বোর্ড কর্মপরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করছে একটু একটু করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবাইকে রক্ষা করবে। তবে ছেলে এসে ললিপপ চাইলেই সেটা দেওয়া হবে না। নিয়মের মধ্যে সাপোর্ট দেওয়া হবে।”