পবিত্র রমজান মাসের প্রাক্কালে, নিত্যপণ্যের আমদানি যেন এক নতুন গতি পেয়েছে। গত শুক্রবার, জানুয়ারি মাসের শেষ দিনে, বিপুল পরিমাণ পণ্য দেশের বাজারে প্রবাহিত হয়েছে—এমনকি কিছু ক্ষেত্রে পুরো রোজার মাসের চাহিদাকেও ছাড়িয়ে গেছে। আমদানিকারকদের মতে, ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে আরও নিত্যপণ্য আসবে, যা সরবরাহের ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর, কিছু বড় শিল্প গ্রুপের আমদানি কমে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তবে, পুরোনো আমদানিকারকরা নতুন উদ্যমে ফিরে এসেছেন এবং নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোও এই খাতে প্রবেশ করেছে। ফলে, বাজারে সরবরাহের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি।
সরকারি উদ্যোগের ফলে, ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। মার্কিন ডলারের সংকটও অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে। এই সবকিছু মিলিয়ে আমদানিতে উৎসাহ বেড়েছে। তবে, বাজারে দাম কমবে কি না, তা নির্ভর করছে পণ্যের আমদানি মূল্যের ওপর। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, মূল্য স্থিতিশীল রাখতে নিয়মিত তদারকি প্রয়োজন।
টি কে গ্রুপের পরিচালক মোস্তফা হায়দার জানান, জানুয়ারিতে আমদানি বেড়েছে এবং ফেব্রুয়ারিতে পাইপলাইনে থাকা পণ্যগুলো বাজারে আসবে। তিনি বলেন, “বিশ্ববাজারও মোটামুটি স্থিতিশীল, তাই দুশ্চিন্তার কিছু নেই।”
### আমদানি বৃদ্ধির পরিসংখ্যান
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) তথ্য অনুযায়ী, রমজান মাসে ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায় তিন লাখ টন। জানুয়ারির প্রথম ২৯ দিনে সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি হয়েছে প্রায় চার লাখ টন। সয়াবিনবীজের আমদানি হয়েছে তিন লাখ টন, যা থেকে প্রায় অর্ধলাখ টন সয়াবিন তেল উৎপন্ন হবে। ফলে, বাজারে সরবরাহের কোনো ঘাটতি থাকবে না।
চিনির চাহিদা তিন লাখ টনের মতো। জানুয়ারিতে অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার টন, যা বিগত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফেব্রুয়ারিতে আরও চিনি আসবে, কারণ বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমছে।
খেজুরের চাহিদা রমজানে ৬০ হাজার টন। জানুয়ারিতে এসেছে ২২ হাজার টন, এবং বড় চালান ফেব্রুয়ারিতে আসবে। পেঁয়াজের আমদানি কম হলেও, দেশে পেঁয়াজের ভরা মৌসুম চলছে, ফলে দাম কমেছে।
### আমদানির ব্যয় ও প্রতিযোগিতা
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারির ১ থেকে ২৯ তারিখের মধ্যে আমদানি হওয়া পণ্যের মোট দাম ১০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৭৪ শতাংশ বেশি। রমজানের নিত্যপণ্যের ৮৮ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসছে। বন্দরে গতকাল ৩২টি জাহাজ ছিল, যার মধ্যে ১২ লাখ ৬৭ হাজার টন পণ্য এসেছে।
এস আলম গ্রুপের আমদানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে, তবে নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে প্রবেশ করছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ এবং টি কে গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানি বাড়িয়েছে। গত বছর ২১৪টি প্রতিষ্ঠান রোজার পণ্য আমদানি করেছিল, এবার তা বেড়ে ৩৬৫ হয়েছে।
### সরকারের তদারকি ও বাজারের ভবিষ্যৎ
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “নিত্যপণ্য সরবরাহে যে শঙ্কা ছিল, তা কাটিয়ে উঠেছে পণ্য আমদানি বৃদ্ধি ও নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোর আগমন।” তবে, তিনি সতর্ক করে বলেন, “রোজার সময় পণ্যের দাম বাড়তে পারে, তাই সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে।”
ফেব্রুয়ারি মাসে ডলারের বিনিময় মূল্য বাড়ানোর ফলে শুল্ক–করের খরচও বে