ভারতের শুল্ক বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ এবার প্রথমবারের মতো পাকিস্তান থেকে চিটাগুড় আমদানি করেছে। ৬ ফেব্রুয়ারি, মোংলা বন্দরের ৮নং জেটিতে নোঙ্গর করে এমটি ডলফিন-১৯ নামক পানামার পতাকাবাহী জাহাজটি। বন্দরের কর্তৃপক্ষ তখন আমদানিকারকদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়। এই জাহাজটি ২২ জানুয়ারি পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে পণ্যবোঝাই হয়ে মোংলার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ৭ মিটার ড্রাফট ও ১৪৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই জাহাজে রয়েছে ৫,৫০০ মেট্রিক টন চিটাগুড়। পুরো চিটাগুড় খালাসের পর, কিছু অংশ মোংলার ইউনাইটেড রিফাইনারি অ্যান্ড বাল্ক স্টোরেজ লিমিটেডে পরিশোধন করা হবে, বাকি অংশ রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলার বাঘাবাড়িতে সড়ক ও নৌপথে নিয়ে যাওয়া হবে।
পূর্বে, বাংলাদেশি ফিডমিলগুলোর জন্য ভারত থেকে চিটাগুড় আমদানি করা হতো। কিন্তু ভারত এই পণ্যে রপ্তানিশুল্ক বৃদ্ধি করায়, ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে পাকিস্তান থেকে আমদানি করা হয়েছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান পিঅ্যান্ডপি ট্রেডিংয়ের প্রোপাইটর আনোয়ারুল হক জানান, “এতে চিটাগুড়ের দাম কমবে।” তিনি আরও বলেন, “এক সময় বাংলাদেশে ১৩টি সুগার মিল ছিল। তখন বাংলাদেশ থেকে চিটাগুড় রপ্তানি করা হতো। আমাদের প্রতিষ্ঠান ১৯৮৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে চিটাগুড় রপ্তানি করেছে। এর ফলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসতো।”
কিন্তু, বেশিরভাগ মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, ভারত থেকে চিটাগুড় আমদানি করতে বাধ্য হন তারা। “ভারত হঠাৎ করে চিটাগুড় রপ্তানিতে শুল্ক বৃদ্ধি করে দেয়, যার ফলে দাম বেড়ে যায়। বিকল্প হিসেবে আমরা পাকিস্তান থেকে চিটাগুড় আমদানি করেছি। আশা করি, পশু খাদ্য তৈরির কোম্পানিগুলোকে আমরা কম দামে সরবরাহ করতে পারব, যা দেশের পশু লালনপালন সেক্টরকে সমৃদ্ধ করবে,” দাবি করেন আনোয়ারুল।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হার্বার অ্যান্ড মেরিন) এমডি শফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, “নতুন নতুন পণ্য আমদানি-রপ্তানি হলে বন্দরের আয় ও ব্যস্ততা বৃদ্ধি পায়। আমদানি ও রপ্তানিকারকদের মোংলা বন্দরের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।”
চিটাগুড়, বা মোলাসেস, মূলত সুগার মিলের বর্জ্য জাতীয় একটি পণ্য। শিল্পের ভাষায়, এটি বাই প্রোডাক্ট হিসেবে পরিচিত। সুগার মিল থেকে চিনি উৎপাদনের সময় যে গাঢ়, চিটচিটে ও চিনিসমৃদ্ধ উপজাত পণ্য সংগৃহীত হয়, সেটিই চিটাগুড়। বাংলাদেশে যখন ১৩টি সুগার মিল সচল ছিল, তখন চিটাগুড় রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হত। কিন্তু ধীরে ধীরে বাংলাদেশি সুগার মিলগুলো বন্ধ হতে থাকে। বর্তমানে, অল্প কিছু সুগার মিল সচল রয়েছে। ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, “যদি বাংলাদেশের সবগুলো সুগার মিল সচল রাখা যায়, তাহলে চিটাগুড়সহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করতে হতো না। দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হতো না।”
এভাবে, পাকিস্তান থেকে চিটাগুড় আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন এক অর্থনৈতিক দিগন্তের দিকে পা বাড়াচ্ছে, যেখানে দেশীয় উৎপাদন ও বৈদেশিক বাণিজ্যের মধ্যে একটি নতুন ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা রয়েছে।