এবারের অস্কারে সেরা তথ্যচিত্রের পুরস্কার জিতেছে ফিলিস্তিনি তথ্যচিত্র ‘নো আদার ল্যান্ড’। এটি শুধু একটি পুরস্কার নয়, বরং একটি শক্তিশালী বার্তা, যা বিশ্বকে ফিলিস্তিনি সংগ্রাম ও মানবাধিকারের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ সময় সোমবার ভোর ৫টায় যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের ডলবি থিয়েটারে ৯৭তম অস্কার অনুষ্ঠানে এই তথ্যচিত্রটির নাম ঘোষণা করা হয়।
‘নো আদার ল্যান্ড’ চার ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতার যৌথ প্রচেষ্টার ফল। নির্মাতাদের মধ্যে রয়েছেন বাসেল আদ্রা, হামদান বল্লাল, ইউভাল আব্রাহাম এবং রাচেল সোর। এই তথ্যচিত্রটি পশ্চিম তীরের মাসাফের ইয়াত্তার একজন তরুণ ফিলিস্তিনি কর্মী আদ্রার গল্প বলেছে। আদ্রার সম্প্রদায় ইসরায়েলি বাহিনীর বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে বাঁচা-মরার লড়াই করছে। শৈশব থেকেই আদ্রা সামরিক দখলে তার অঞ্চলে বাড়িঘর ধ্বংস এবং বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার নির্মম বাস্তবতা দেখে বড় হয়েছেন। এই অভিজ্ঞতা তার গল্পকে গভীর ও আবেগঘন করে তুলেছে।
তথ্যচিত্রটির নির্মাণে আদ্রার গল্পের পাশাপাশি একজন ইসরায়েলি সাংবাদিকের ভূমিকাও উঠে এসেছে। এই সাংবাদিক নিজেও ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার সাক্ষী। তিনি বৈষম্যের বিরুদ্ধে আদ্রার লড়াইয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন। এই যৌথ সংগ্রাম তথ্যচিত্রটিকে একটি বিশ্বজনীন বার্তায় পরিণত করেছে, যা শুধু ফিলিস্তিনি সংগ্রামই নয়, বরং মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের জন্য লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
‘নো আদার ল্যান্ড’ এর আগেও বেশ কয়েকটি প্রাক-অস্কার পুরস্কার বিভাগে প্রভাব বিস্তার করেছে। এটি আইডিএ পুরস্কারে সেরা তথ্যচিত্র এবং সেরা পরিচালকের পুরস্কার জিতেছে। এছাড়াও, ইউরোপীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা ইউরোপীয় তথ্যচিত্র এবং বার্লিনে সেরা তথ্যচিত্রের মতো সম্মাননা পেয়েছে। এই অর্জনগুলি তথ্যচিত্রটির শক্তিশালী গল্প বলার দক্ষতা এবং নির্মাতাদের সাহসিকতার স্বীকৃতি।
অস্কার জয়ের মাধ্যমে ‘নো আদার ল্যান্ড’ শুধু একটি চলচ্চিত্রের সাফল্য নয়, বরং এটি একটি বৈশ্বিক আলোচনার সূত্রপাত করেছে। এটি ফিলিস্তিনি জনগণের সংগ্রাম, তাদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার বেদনা এবং মানবাধিকারের জন্য লড়াইয়ের কথা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছে। এই তথ্যচিত্রটি শুধু পুরস্কার জিতেনি, বরং এটি একটি আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
‘নো আদার ল্যান্ড’ এর সাফল্য চলচ্চিত্র জগতের জন্য একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটি শুধু গল্প বলার মাধ্যম নয়, বরং এটি একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, যা বিশ্বকে পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এই তথ্যচিত্রটি শুধু ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি নির্মাতাদের যৌথ প্রচেষ্টার ফল নয়, বরং এটি মানবতার জয়গান, যা বিশ্বকে একত্রিত করার একটি বার্তা দিয়েছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, এপি