নারীদের অধিকার ও মর্যাদা উদযাপনের জন্য এক শতাব্দী পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী নারী দিবস পালিত হয়ে আসছে। তবে, এবারের নারী দিবস বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এক ভিন্নধর্মী বিষাদ নিয়ে এসেছে। গত কয়েক মাস ধরে দেশে ধর্ষণ, নারী উত্ত্যক্ত এবং নির্যাতনের ঘটনা রীতিমতো উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এই পরিস্থিতি যদিও নতুন নয়, তবে বর্তমানে নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন—যেখানে অতীতে তারা কঠিন মুহূর্তে, এমনকি জুলাই আন্দোলনের মতো দেশের ক্রান্তিলগ্নেও পুরুষদের পাশাপাশি অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছেন। আজও তারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে কাজ করে দেশের অগ্রগতির পথে ভূমিকা রাখছেন। তবুও, তাদের জন্য বাইরে নিরাপত্তা এখনো এক বড় চ্যালেঞ্জ।
নারী দিবসের এ উপলক্ষে, দেশের তারকারা নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেছেন এবং টুম্পা দেবনাথ সাজিয়েছেন তাদের এই বক্তব্যগুলো। মনিরা আক্তার মিঠু বলেন, “নারীদের নিরাপত্তা বাংলাদেশে কখনোই ছিল না। অতীতে যেমন নিরাপত্তার অভাব ছিল, বর্তমানে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর জন্য আমি দেশের আইন ব্যবস্থাকেই দায়ী করি, কারণ আমাদের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। নারীদের নিরাপত্তা যারা বিঘ্নিত করবে, তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিত। নানা সেমিনার হয়, নানা আলোচনা হয়, কিন্তু দিন শেষে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়তেই থাকে।”
অপি করিমও তার উদ্বেগ জানিয়েছেন: “সেদিন ইন্টারনেটে র্যানডম সার্চ করতে গিয়ে আমি একটি ছোট্ট তথ্য পেলাম। তা শেয়ার করি—একজন পুরুষ সপ্তাহে প্রায় ৭২ ঘণ্টা কাজ করেন, আর একজন নারী প্রায় ১২৮ ঘণ্টা। এই পার্থক্য প্রায় ৫৬ ঘণ্টার। কেন এমন? এ প্রশ্ন আমি আপনাকে, আমাকে এবং সমাজকে করছি।”
অপু বিশ্বাস তার বক্তব্যে বলেন, “নারীদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। প্রতিদিন সকালটা শুরু হয় নারীদের হাত ধরেই। সংসার, সন্তান নিয়ে তাদের ব্যস্ততা আর আগ্রহ আমাদের জীবনের অমূল্য অংশ। আমার মেয়ে যখন আমাকে বলে, ‘আপনি এগিয়ে যান,’ তখন আমার কাছে এটা এক বিশাল প্রাপ্তি। আমার জীবনের প্রতিটা দিনই নারী দিবস। কারণ, প্রতিটি নারীর জীবনে প্রতিদিনই একটি যুদ্ধ শুরু হয়।”
কাজী নওশাবা আহমেদ বলেন, “আমি মা, বোন, সন্তান হিসেবে একজন নারী। এসব নিগৃহীত হওয়ার ঘটনাগুলো খুব ব্যথিত ও শঙ্কিত করে তোলে। মাগুরায় শিশু ধর্ষণ কিংবা ঝিনাইদহে মাদরাসা ছাত্রের প্রহারের ঘটনা শুনে সত্যিই ভালো থাকার কোনো কারণ দেখি না। আশপাশের পরিস্থিতি দেখে ভালো থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।”
সোমনুর মনির কোনাল তার মনের কষ্ট ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “নারী দিবস নিয়ে কথা বলতে লজ্জা লাগছে। কী বলব? এক ছোট শিশু ধর্ষিত হলো নিজের বোনের বাড়িতে গিয়ে। শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসব ঘটনা কীভাবে চুপ হয়ে দেখব? আমরা কিছু বলার যোগ্যতা রাখি কী? নারী দিবসের প্রতিফলন যখন এসব ঘটনার মাঝে দেখি, তখন সত্যিই ভাবতে বাধ্য হই, আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি?”
এরপর, এমন এক বাস্তবতায়, যেখানে একের পর এক নারীর অধিকার খর্ব হচ্ছে, শোবিজের নারী সদস্যরা নিজেরাই শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন তারা, আর এই পরিস্থিতি তাদের মনে ভয় ও উদ্বেগ তৈরি করছে। সেসময়, প্রতিবাদ হয়েছে কিছু, কিন্তু পরিস্থিতি এখনও বদলায়নি। তবে, একেবারে গভীরভাবে ভাবলে, ‘কেমন আছি?’ এই প্রশ্নের উত্তর হয়ে ওঠে একেবারে আলাদা, সবার কাছে।
এবং তাই, নারী দিবসের পরেও, সত্যি বলতে, এক গভীর কষ্ট ও অসন্তোষের তলিয়ে থাকা সমাজে নারীরা আজও তাদের ন্যায্য অধিকার ও নিরাপত্তার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
(ইত্তেফাক/এসএ)