বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচনের আগে নতুন মেরুকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের সুবিধা নিশ্চিত করতে একে অপরের সঙ্গে জোট বাঁধার চেষ্টা করছে। ভোটের সমীকরণ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা, যেখানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আলাদাভাবে ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছে। তবে, এই কার্যক্রমে দলগুলো সচেতনভাবে একে অপরকে এড়িয়ে চলছে, ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের প্রচ্ছন্ন লড়াই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি দেশের অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন স্থগিত হওয়ার পর রাজনীতির হাওয়া মোড় নিচ্ছে। বিএনপি এবং এনসিপির মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও গণ অভ্যুত্থানের ইস্যুতে অভিন্ন অবস্থান তৈরি হয়েছে, যা তাদের মধ্যে জোট গঠনের সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে। এদিকে, জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলনসহ অন্যান্য ইসলামপন্থি দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনি সমঝোতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও ঐক্য গঠনের চেষ্টা চলছে, যাতে তারা বড় দলের সঙ্গে দরকষাকষিতে শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। এনসিপির সঙ্গে জামায়াতের মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে বিরোধ দেখা গেলেও, ভবিষ্যতে তা পরিবর্তিত হতে পারে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোট হওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে ইসলামি দলগুলো একত্রিত হতে পারে। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জানান, বিএনপি জনগণের কাছে যাওয়ার জন্য আলোচনা করছে এবং ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়। তিনি বলেন, “আমরা আলোচনা করে সবার মতামত নিয়ে নির্বাচনের জন্য যা করা প্রয়োজন, তা-ই করব।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান মনে করেন, ইসলামপন্থিরা নির্বাচনের আগে একত্রিত হতে পারে। জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন দলকে নিয়ে ঐক্য গঠনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে, তবে এই জোট এখনই আত্মপ্রকাশ করবে না। রাজনৈতিক অঙ্গনে চলমান এই মেরুকরণ এবং জোট গঠনের প্রক্রিয়া আগামী নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই তৎপরতা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে।