প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সফরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।মঙ্গলবার রাতে লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীরা কাজ করবেন। তবে পাচার হওয়া অর্থ যুক্তরাজ্য থেকে ফেরত আনা সম্ভব হবে কিনা, এ নিয়ে ঢাকায় চলছে নানা আলোচনা। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, বিগত শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর একটি বড় অংশ যুক্তরাজ্যে পাচার হয়েছে, তাই প্রধান উপদেষ্টার এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন তারা। তবে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, যুক্তরাজ্য থেকে এই পাচারকৃত অর্থ খুব স্বল্পমেয়াদে ফেরত আনা সম্ভব নয়। অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার জন্য যে অর্থের সঙ্গে যোগসূত্র প্রমাণ করা হবে, সেটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার সফর ঘিরে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), স্পটলাইট অন করাপশন এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-ইউকে যুক্তরাজ্যকে পাচার হওয়া অর্থ বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা সন্দেহভাজন অর্থ পাচারকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পাচার হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাজ্যকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। স্পটলাইট অন করাপশনের নির্বাহী পরিচালক সুসান হাওলি বলেন, যুক্তরাজ্য সরকারের উচিত অবিলম্বে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ জব্দে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের মালিকানাধীন ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি ইতোমধ্যে ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দ করেছে। এখন প্রধান উপদেষ্টার সফর এবং পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।