চট্টগ্রামে ব্যবসায়ী আবু সাঈদ চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে একই জমির দলিল বন্ধক রেখে দুটি ব্যাংক থেকে ১০৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তিনি মেসার্স সিদ্দিক ট্রেডার্স ও সাঈদ ফুডস লিমিটেডের মালিক। অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১১ সালের ১৩ এপ্রিল তিনি ওয়ান ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে মেসার্স সিদ্দিক ট্রেডার্সের নামে ৪৯ কোটি টাকা ঋণ নেন। এর বিপরীতে চট্টগ্রাম সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রিকৃত ২৮ শতক সম্পত্তি বন্ধক হিসেবে দেখানো হয়। ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে ২০১১ সালের ১৬ জুন ৫৪ কোটি ১৮ লাখ টাকায় উন্নীত করেন সম্রাট। তবে, পরিশোধের শর্তে মেসার্স সিদ্দিক ট্রেডার্সও দায়বদ্ধ থাকবে উল্লেখ করা হয়। বর্তমানে ওয়ান ব্যাংকের ঋণ সুদে-আসলে ১৮১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এদিকে, সম্রাট জালিয়াতির মাধ্যমে একই জমির ভিন্ন ৭০৬৪ নম্বর বন্ধকি দলিল তৈরি করে সোনালী ব্যাংক লালদীঘি করপোরেট শাখায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল বন্ধক রেখে ৫১ কোটি টাকা ঋণ নেন। ঋণ পরিশোধ না করায় তিনি খেলাপি হয়ে পড়েন, এবং বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে ১৭৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। দুই ব্যাংকের কাছে সম্রাটের মোট পাওনা ৩৬০ কোটি ৪৭ লাখ টাকায় পৌঁছেছে। সোনালী ব্যাংক যখন সম্রাটের বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে তুলতে যায়, তখন জালিয়াতির বিষয়টি ওয়ান ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীর জুবিলী রোডের টাওয়ার ইন হোটেলের পাশে ২৮ শতক সম্পত্তি নিয়ে দুই ব্যাংকের মধ্যে টানাটানি চলছে। জালিয়াতির বিষয়টি জানার পর সম্রাট তা ধামাচাপা দিতে তৎপর হন। গত ৯ মে তিনি বন্ধক রাখা সম্পত্তি বিক্রি করে ঋণ সমন্বয় করার জন্য আবেদন করেন, কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাতে সাড়া দেয়নি। সোনালী ব্যাংক গত ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম আদালতে সম্রাটের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতি মামলা করেছে। পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর এসআই আল আমিন জানান, ব্যবসায়ী সম্রাটের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে সম্পত্তি বন্ধক রাখার বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে এবং শিগগির আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। ওয়ান ব্যাংকের লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড রিকভারি ডিভিশনের ম্যানেজার জুয়েল দাশ বলেন, “সম্রাটের নিখুঁত জালিয়াতির বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছি এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছি।” সোনালী ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, দীর্ঘদিন তাগাদার পর পরিশোধ না করায় সম্রাটের কাছে ব্যাংকের পাওনা ১৭৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এদিকে, আবু সাঈদ চৌধুরী সম্রাট বলেন, “ঋণের জন্য দায়বদ্ধ সম্পত্তি নিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।” এই ঘটনা চট্টগ্রামের ব্যবসায়িক পরিবেশে একটি বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করেছে, যা ভবিষ্যতে ব্যাংকিং খাতে আরও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।