বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বিদেশে অর্থ পাচারকারী ধনকুবেরদের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতায় যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি জানান, অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর মামলার ক্ষেত্রে আর্থিক সমঝোতা একটি সম্ভাব্য বিকল্প হতে পারে, যা সরকারের সম্পদ পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে সহায়ক হবে। গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো যতটা সম্ভব অর্থ ফেরত আনা।” তিনি উল্লেখ করেন যে, কিছু ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়ার চেয়ে সমঝোতার মাধ্যমে বেশি সম্পদ ফিরে পাওয়া সম্ভব হলে সেটিও বিবেচনায় নেওয়া হবে। তবে গুরুতর দুর্নীতি কিংবা প্রতারণা সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর ক্ষেত্রে সরকারের কঠোর অবস্থান বজায় থাকবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন প্রশাসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারসহ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কিছু পরিবারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতোমধ্যে ১১টি তদন্ত শুরু করা হয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি মামলায় অভ্যন্তরীণ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো গত ১৫ বছরে ক্ষমতাসীনদের দ্বারা বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ শনাক্ত ও ফিরিয়ে আনা। প্রশাসন বিভিন্ন বিদেশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা শুরু করেছে। লন্ডনে সফরকালে মুহাম্মদ ইউনূস ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আরও সক্রিয় সহযোগিতার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “এটা চুরি হওয়া অর্থ। আইনগতভাবে এবং আমি বলব নৈতিকভাবেও, যুক্তরাজ্য সরকারের উচিত এই অর্থ শনাক্ত করতে সহায়তা করা।” একটি অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনার সরকারের সময় বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে, যা দেশের জাতীয় অর্থনীতির ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ মহল ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জালিয়াতি ঋণ, ভুয়া প্রকল্প ও অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে সরকারি অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। এখন দেখার বিষয় হলো, বাংলাদেশ সরকার এই উদ্যোগের মাধ্যমে কতটা সফলতা অর্জন করতে পারে এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কতটা কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারে।