আজ মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত নতুন শুল্ক কার্যকর হয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপিত হয়েছে। এই শুল্কের ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে ঘোষণা করেন, “মধ্যরাত হয়েছে!!! এখন থেকে বহু বিলিয়ন ডলারের ট্যারিফ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাহিত হচ্ছে!” ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে ২৭ আগস্ট থেকে, যদি না দেশটি রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ করে। দিল্লি এই পদক্ষেপকে অন্যায় ও অবিচার বলে নিন্দা জানিয়েছে এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বুধবার, ট্রাম্প বিদেশে তৈরি কম্পিউটার চিপের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্কের হুমকি দেন। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং, এসকে হাইনিক্স এবং তাইওয়ানের টিএসএমসি নতুন এই শুল্ক থেকে আপাতত রেহাই পেয়েছে। লাওস এবং মিয়ানমারের মতো উৎপাদননির্ভর দেশগুলোর ওপর ৪০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসানো হয়েছে, যা এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দিতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক থাকা দেশগুলোকে টার্গেট করেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্য, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে ওয়াশিংটনের সাথে সমঝোতায় পৌঁছে হুমকিকৃত উচ্চ শুল্ক থেকে কিছুটা রেহাই পেয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথেও একটি চুক্তি হয়েছে, যার আওতায় ১৫ শতাংশ শুল্ক মেনে নিয়েছে ব্রাসেলস। কানাডার ওপর ট্যারিফ ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে, ফেন্টানিল ও অন্যান্য মাদক পাচার ঠেকাতে সহযোগিতা না করার অভিযোগে। তবে ইউএসএমসিএ চুক্তির কারণে বেশিরভাগ কানাডিয়ান পণ্যই এই শুল্ক থেকে বাদ পড়বে। মেক্সিকোর ওপর নতুন শুল্ক আরোপ ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে, চলমান আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে। ব্রাজিলের ওপরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যেখানে ট্রাম্প ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভার বিরুদ্ধে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আক্রমণ করার অভিযোগ এনেছেন। চীনের সঙ্গে ৯০ দিনের ট্যারিফ স্থগিতাদেশের মেয়াদ ১২ আগস্ট শেষ হতে চলেছে, এবং তার আগেই নতুন করে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্বজুড়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এই শুল্ক নীতিকে কেন্দ্র করে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করলেও, কিছু প্রতিষ্ঠান মার্কিন বাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যেমন অ্যাপলের নতুন ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনা। এই নতুন শুল্কের ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্যে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, তা ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক সম্পর্কের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা এখন এই পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন, কারণ এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গতিপথকে পরিবর্তন করতে পারে।