চলতি বছরে বিশ্বব্যাপী ঋণের বোঝা মোট জিডিপির ৯৪.৭ শতাংশে পৌঁছেছে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য একটি উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে। তবে এমন পরিস্থিতিতেও কয়েকটি দেশ নিজেদের ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাম্প্রতিক ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বের সবচেয়ে কম ঋণগ্রস্ত দেশগুলোর বেশিরভাগই এশিয়ার ছোট ছোট অর্থনীতির দেশ। এদের প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল এবং ঋণের বোঝা তুলনামূলকভাবে কম। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম লিখটেনস্টাইন, যেখানে ঋণের পরিমাণ মাত্র ০.৫ শতাংশ। বিশ্বের একেবারে ‘শূন্য’ ঋণের খাতায় রয়েছে মাকাও। বিশ্বের বৃহত্তম জুয়ার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চল ক্যাসিনো ও গেমিং শিল্প থেকে বিপুল আয় করে, যা তাদের ঋণের প্রয়োজনীয়তা দূর করে রেখেছে। আর্থিক রিজার্ভের শক্তিশালী অবস্থানও এতে ভূমিকা রাখে। লিখটেনস্টাইন, যেটি ইউরোপের অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে, সেরা দশের তালিকায় দ্বিতীয়। এখানে জনসংখ্যার তুলনায় চাকরির সুযোগ ও নিবন্ধিত করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি হওয়া দেশটির অর্থনৈতিক শক্তির প্রতিফলন। মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ কুয়েত জিডিপির মাত্র ৭.৩ শতাংশ ঋণ নিয়ে তালিকার ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। তেল থেকে আসা আয় তাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মূল ভিত্তি। ২০২৪ সালে প্রায় ৭ হাজার কোটি ডলার আয় কুয়েতের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। রাশিয়াও তেল রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল থাকলেও ঋণের বোঝা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও কঠোর আর্থিক নীতি ও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের কারণে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতেও রাশিয়ার অর্থনীতি তুলনামূলক শক্ত অবস্থানে রয়েছে, যেখানে ২০২৫ সালের জন্য ঋণের পরিমাণ জিডিপির ২৩.১ শতাংশ অনুমান করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে দেখা যায়, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রাকৃতিক সম্পদ নির্ভর আয়ের ফলে কিছু দেশ ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত থেকে অর্থনৈতিক সংকটের ঝুঁকি এড়াতে সক্ষম হচ্ছে।