যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার টাম্পায় এক নৈশভোজ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির ভারতের বিরুদ্ধে পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন, যা ভারতসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে পাকিস্তান যদি অস্তিত্বের সংকটে পড়ে, তবে তারা “বিশ্বের অর্ধেক” ধ্বংস করে দেবে। এই বক্তব্যকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় “দায়িত্বজ্ঞানহীন” এবং পাকিস্তানের “চিরাচরিত স্বভাব” হিসেবে অভিহিত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। টাম্পায় পাকিস্তানি বংশোদ্ভূতদের এক সমাবেশে মুনির বলেন, “আমরা একটি পারমাণবিক শক্তিধর জাতি। যদি আমরা মনে করি আমরা ধ্বংসের পথে, তাহলে পৃথিবীর অর্ধেক আমাদের সঙ্গে নিয়ে যাব।” তিনি সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়েও হুমকি দেন, ভারত যদি এই চুক্তির আওতায় বাঁধ নির্মাণ করে, তবে পাকিস্তান “১০টি ক্ষেপণাস্ত্র” দিয়ে তা ধ্বংস করবে। তিনি আরও বলেন, “সিন্ধু নদ ভারতের পারিবারিক সম্পত্তি নয়। আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের কোনো অভাব নেই।” এই বক্তব্যের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “আসিম মুনিরের মন্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান নিয়ে দীর্ঘদিনের সন্দেহকে আরও দৃঢ় করেছে।” বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “যে দেশে সেনাবাহিনী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করে, তাদের হাতে পারমাণবিক অস্ত্রের নিরাপত্তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ রয়েছে।” ভারত স্পষ্ট করেছে যে, তারা পারমাণবিক হুমকির সামনে মাথা নত করবে না এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় সব পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে। মুনিরের এই মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে তৃতীয় কোনো দেশের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য পারমাণবিক হুমকি হিসেবে প্রথম ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা বন্ধুত্বপূর্ণ দেশে এমন বক্তব্যের জন্য “দুঃখজনক” বলে উল্লেখ করেছে ভারত। দুই মাসের মধ্যে মুনিরের এটি দ্বিতীয় যুক্তরাষ্ট্র সফর। তিনি এর আগে জুনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন, যেখানে তিনি ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলেন। এই হুমকি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে, বিশেষ করে এপ্রিলে পাহালগামে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে অপারেশন সিন্দুর পরিচালনা করে, যা পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানে। ভারতের রাজনৈতিক মহল থেকেও এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা এসেছে। শিবসেনা (ইউবিটি) সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী মুনিরকে “ব্যর্থ মার্শাল” আখ্যা দিয়ে বলেছেন, “এটি একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের কাপুরুষোচিত হুমকি।” বিজেপি নেতা গৌরব ভাল্লাভ বলেন, “নতুন ভারত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে। পাকিস্তানের এই হুমকি সন্ত্রাসবাদের ভাষা।” আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, সাবেক পেন্টাগন কর্মকর্তা মাইকেল রুবিন মুনিরের বক্তব্যকে “ওসামা বিন লাদেনের মতো” বলে সমালোচনা করেছেন, যা দক্ষিণ এশিয়ায় পারমাণবিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের পারমাণবিক নিরাপত্তা এবং দায়িত্বশীলতার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করছে। এই ঘটনা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে, এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য কূটনৈতিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তা আরও জোরালো হয়েছে।