কাতারে ইসরায়েলের হামলার প্রেক্ষিতে অঞ্চলটিতে নিরাপত্তা-জটিলতা ক্রমে বেড়ে যাচ্ছে। ঠিক সেই বিভ্রান্তিকালেই রিয়াদের আল ইয়ামামা প্রাসাদে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের মধ্যে স্বাক্ষরিত যৌথ কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি এ পরিস্থিতিকে আবারো নতুন করে ঘুরিয়ে দিয়েছে। সংক্ষিপ্ত ঘোষণায় বলা হয়েছিল, উভয় দেশের কোনো একটির বিরুদ্ধে আক্রমণ হলে সেটিকে দুটি দেশের বিরুদ্ধে আক্রমণ হিসেবে গণ্য করা হবে—এক ধরনের ‘এক সারির’ প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি। চুক্তি স্বাক্ষরের পরbeek প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতের সরকার থেকে শুরু করে অঞ্চলের বিশ্লেষক, সাংবাদিক ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা এই চুক্তির সম্ভাব্য নজিরবিহীন পরিণতি নিয়ে তর্ক-আলোচনা শুরু করেছেন। ভারতীয় কূটনীতির উদ্বেগ প্রকাশ ও বাহ্যিক সুদূরপ্রসারী ভাবনার কারণে চুক্তিটির কৌশলগত ব্যবধান অনিশ্চিততার সঙ্গে ভর করে। পাকিস্তান ও সৌদি আরবের দীর্ঘদিনের মিলিত সামরিক সহযোগিতার ইতিহাস রয়েছে; ২০১৫ সালে সৌদি নেতৃত্বাধীন একটি জোটে পাকিস্তানের বিশেষ বাহিনী অভিজ্ঞতা দিয়ে সহায়তা করেছিল। তবে এবার যে চুক্তি আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাক্ষরিত হলো, সংশ্লিষ্ট দেশের বহুবিধ কৌশলগত উদ্দেশ্য ও অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ বলে অভিহিত করা হচ্ছে। দুই দেশের সরকারি বিবৃতিতে এই চুক্তিকে অঞ্চল ও বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা সংরক্ষণের অঙ্গীকার হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। চুক্তির সরাসরি ধারা হলো প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষা সংহতি বাড়ানো; কিন্তু এর পিছনে থাকা প্রশ্নগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে—পারমাণবিক সক্ষমতা ও ‘নিউক্লিয়ার ছাতা’ সম্পর্কিত অনুমান। পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা ও ডেলিভারি সিস্টেম সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরেই কূটনৈতিক গুঞ্জন আছে; চুক্তি স্বাক্ষরের পর কর্তৃপক্ষের অনানুষ্ঠানিক সংযোগ বা সম্ভাব্য সহায়তার সম্ভাব্যতা নিয়েও জোর আলোচনা দেখা দিয়েছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র হস্তান্তরের সম্ভাবনা কমই থাকলেও, নির্দিষ্ট সংকটের সময় পারস্পরিক কৌশলগত সমন্বয় ও সমর্থন მოშ্চিত নয়—এটাই উদ্বেগের মূল। নিঃসন্দেহে, এই চুক্তি কেবল দু’দেশের সম্পর্কের কাগজেই বন্দি নয়; এটি মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিক समीকারে নতুন বাস্তবতা আনতে পারে। চুক্তিটি যদি কোনো গোপন ধারা বা পরোক্ষ দফায় রাখে, তবে তা মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা ও শক্তি ভারসাম্যে সরাসরি প্রভাব ফেলবে—বিশেষত যখন কাতার-ইসরায়েল উত্তেজনা এবং আমেরিকার নীতিগত অবস্থানও বিবেচনায় নেয়া হবে। চুক্তি নিয়ে সমালোচনামূলক দিক থেকে বলা হচ্ছে, এটি একটি প্রতিশ্রুতিশীল ঘরানার কৌশলগত অঙ্গীকার; আবার অনেকে বলছেন, এটি আনুষ্ঠানিক ট্রিটি নয়—ট্রিটি এবং সাধারণ ঘোষণাপত্রের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট করা প্রয়োজন। সাবেক কূটনীতিকদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, চুক্তির টেক্সটে থাকা গোপন শর্ত থাকলে সেটি আঞ্চলিক নিরাপত্তার ওপর অনিশ্চয়তা বাড়াবে। অন্যদিকে কিছু পাকিস্তানি বিশ্লেষক ও সংবাদকর্মী এই চুক্তিকে ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে দেখছেন—কারণ এটি বৃহৎ অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পদকে একত্রিত করে নিরাপত্তা কাঠামোকে শক্ত করে। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও সামরিক দক্ষতা দেখিয়ে এই চুক্তি অঞ্চলীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ইসলামাবাদের স্থানকে আরও প্রগাঢ় করতে পারে—তবে এ পথ কোনোভাবেই ঝুঁকিমুক্ত নয়। চুক্তির বাস্তব প্রভাব নির্ণয়ে সময় লাগবে। দ্রুত তৈরি হওয়া রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া, কূটনৈতিক প্রতিরোধ বা সমঝোতা, এবং সামরিক অঙ্গীকার বাস্তবে কীভাবে রূপ নেবে—এই তিনটি দিকই গুরুত্ব রাখে। ততক্ষণে এই চুক্তি আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও নিরাপত্তা পরিমণ্ডলে অন্তত নতুন প্রশ্ন ও শঙ্কার জন্ম দিয়েছে; এবং বিশ্ব শক্তি মানচিত্রে এক অস্থির, কিন্তু ব্যতিক্রমী অধ্যায় যুক্ত হয়েছে।