রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৭:২৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে প্রায় এক লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা: জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীর ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় মূল হোতা গ্রেফতার চট্টগ্রামের পটিয়ায় পুলিশের সঙ্গে এনসিপি ও ছাত্র আন্দোলনের সংঘর্ষ: উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ আবু সাঈদ হত্যা : ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল চীন সফর শেষে দেশে ফিরলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চীন সফর শেষে দেশে ফিরলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকার ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উদযাপনের জন্য জেলা পর্যায়ে বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করেছে এনবিআরে প্রবেশ ও বের হওয়া নিষিদ্ধ, আন্দোলনকারীদের অবস্থান প্রকাশ ইরানে যুদ্ধের পরিস্থিতিতে ২৫০ বাংলাদেশির দেশে ফেরার জন্য নিবন্ধন: সরকার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে

নিষিদ্ধ, পলিথিন তবুও কাঁচাবাজারে হাতে হাতে

bornomalanews
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১৪০ Time View

কাঁচাবাজারে নিষিদ্ধ করার পরও দেদারছে পলিথিনের ব্যবহার চলছে; ক্রেতা-বিক্রেতাদের কারও এ নিয়ে কোনো ধরনের বাছবিচার চোখে পড়ছে না।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে রোববার বিকালে বেগুন কিনছিলেন হারুন অর রশিদ। এসময় তার কাছে কোনো বাজারের ব্যাগ না থাকায় বিক্রেতা তাকে পলিথিনে করেই দিলেন।

নিষিদ্ধের পরও কেন পলিথিনে নিচ্ছেন-প্রশ্নে তিনি বলেন, ”এখন অফিস থেকে বের হয়েছি। অফিসে তো বাজারের ব্যাগ আনা যায় না। সরাসরি বাসা থেকে এলে ব্যাগ আনা যেত। আর বড় কথা হল বিকল্প না রেখে পলিথিন বন্ধ করে আবার জরিমানা করলেই তো হল না। আগে বিকল্প লাগবে, না হয় শুধু বিড়ম্বনাই হবে মানুষের।“

পরিবেশের সুরক্ষায় দুই যুগ আগেও পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে তা যেন ভুলেই গেছেন মানুষ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি ১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারগুলোতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে অভিযানের কথা জানানো হয়।

একই সঙ্গে পলিথিন ও পলিপ্রোপাইলিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, মজুদ, পরিবহন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। এর বিরুদ্ধে অভিযানও নেমেছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়। পলিথিন জব্দের পাশাপাশি জরিমানাও করা হচ্ছে।

তবুও নিষেধাজ্ঞার তিন দিন পর বিকল্প না থাকার অজুহাতে রাজধানীর বৃহত্তম কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারের পাশাপাশি স্থানীয় ছোট কাঁচাবাজারগুলোতেও পলিথিনে পণ্য দেওয়া হচ্ছে আগের মতই।

তবে সুপারশপে পলিথিন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আসার এক মাস পর সেখানে অনেকটাই পরিবর্তন চোখে পড়েছে।

পলিথিনের বদলে এখন সেখানে কাগজের ঠোঙায় পণ্য দেওয়া হচ্ছে; বিক্রি হচ্ছে কাপড় বা পাটের ব্যাগ। ক্রেতারা বাধ্য হয়ে সেসব ব্যাগ কিনছেন কিংবা বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে আসছেন।

চার দেয়ালের সুপারশপে এমন পরিবর্তন আনা সম্ভব হলেও কাঁচাবাজারগুলোর পরিস্থিতি পাল্টানো বেশ কঠিন হবে বলে মনে করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আশরাফুল ইসলাম বলেন, গ্রাহক তো পলিথিন ছাড়া মাল নিতে চায় না। কেউ ব্যাগ নিলে তাকে সেটাতেই দেওয়া হয়।

“আমাদের তো বিক্রি করে করে খেতে হবে। পলিথিনে না দিলে আরেক দোকানে যায়। যদি সব দোকানে একসাথে পলিথিন দেওয়া বন্ধ করতে পারে তাইলে কাজ হবে। না হয় পলিথিন চলতেই থাকবে।”

কারওয়ান বাজারের এ দোকানি এ বাজার থেকেই এদিন সকালে এক কেজি পলিথিন কিনেছেন ২২০ টাকা কেজি দরে। তিনি দোকান থেকে পলিথিন কিনেছেন তার পাশের পলিথিনের বাকি দুই দোকান বন্ধ ছিল সারাদিন। যেটি খোলা ছিল সকালে সেটিও দুপুর গড়াতে বন্ধ হয়ে যায়।

অনেকটা গোপনে পলিথিনের বেচাকেনার তথ্য দেন অনেক পণ্য বিক্রেতা। তারা বলেন, মূলত জরিমানার ভয়ে সেসব দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে।

এ বাজারে সবজি ও মুদি পণ্যের মত মাছ-মাংস বিক্রিতেও পলিথিন ব্যবহার হতে দেখা গেছে।

খাসির মাংস বিক্রেতা মো. আবু সিদ্দিক পলিথিনের বিকল্প হিসেবে অন্য একটা ব্যাগ রাখার কথা বললেন, যেটি সরাসরি প্লাস্টিকের না। তারা সেটিতে মাংস দিতে চাইলেও ক্রেতারা রাজি হচ্ছেন না। তার ভাষ্য, “মাংসের ক্ষেত্রে আসলে পলিথিন বা এর মত কিছু একটা প্রয়োজন। এটা ছাড়া অন্য কিছু ক্রেতারাও পছন্দ করে না।”

এ দোকানি যে ব্যাগ দেখাচ্ছিলেন সেটিও মূলত প্লাস্টিকেরই তৈরি। এটিও যে নিষিদ্ধের তালিকায় সেটি তিনি জানেন না বলেই দাবি তার। দোকানে পলিথিন রাখার বিষয়ে তার ভাষ্য, ক্রেতারা জোর করলে তখন না দিয়ে উপায় থাকে না।

রাজধানীর বৃহত্তম এই পাইকারি কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি সুজন চৌধুরী বলেন, সবজি বিক্রেতা থেকে শুরু করে সবাইকে পলিথিন ব্যবহার না করতে প্রচার করা হয়েছে। তবে তারা সরাসরি নিয়ন্ত্রণে না থাকায় সমিতির তেমন কিছু করার থাকে না।

“আশার কথা আগের চেয়ে পলিথিনের ব্যবহার কমতে দেখেছি। আশা করি আরও কমে আসবে।”

কারওয়ান বাজার থেকে কিছুটা দূরের বিজয় সরণির ছোট আকারের স্থানীয় কলমিলতা কাঁচাবাজারেও পলিথিনের দেদারসে ব্যবহার হতে দেখা গেল।

সেখানে নাদিম আহমেদ নামে এক ক্রেতা বলেন, “দুই কেজির মত মাছ নিলাম। এগুলোর তিন ভাগের এক ভাগ রান্না হবে। বাকিগুলো ফ্রিজে রাখব। তো আমাকে বলেন পলিথিন ছাড়া কীভাবে রাখব?”

নিষিদ্ধ পলিথিনে বাজার সয়লাব থাকার এমন অবস্থার মধ্যে সরকারের এমন পদক্ষেপ ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন অনেকে। কারওয়ান বাজার ও কলমিলতা উভয় বাজারে তাদেরকে বাসা থেকে বড় ব্যাগ আনতে দেখা গেছে। তাদের কেউ কেউ শুকনো পণ্য পলিথিনে না নিয়ে সরাসরি ব্যাগেই রাখছিলেন।

তেঁজগাওয়ের বাসিন্দা আরমিনা ইসলাম হাতে করে ব্যাগ নিয়ে কারওয়ান বাজারে কেনাকাটা করছিলেন। বললেন, “আসলে পলিথিন যে কত ক্ষতি সেটা মানুষের বোঝা উচিত। আমরা অপ্রয়োজনেও কিন্তু পলিথিন নেই। একটা বাজারের ব্যাগেই কিন্তু সব একসাথে রেখে বাসায় নিয়ে আলাদা করে রাখা যায়।”

এদিকে নিষিদ্ধ পলিথিন মজুদ ও বাজারজাতের বিরুদ্ধে আগের ঘোষণা অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান শুরু করেছে।

সারা দেশে পলিথিন কারখানায় অভিযান চালিয়ে ‘১ হাজার ৭০০ কেজি’ পলিথিন জব্দ করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

এর মধ্যে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকেই এক ট্রাকে প্রায় ১ হাজার কেজি ও দেশের অন্যান্য স্থান থেকে ৭৪৬ কেজি পলিথিন জব্দ করা হয়েছে।

সেইসঙ্গে অভিযানে পলিথিন কারখানাগুলোকে ১ লাখ ৮০ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে রোববার পরিবেশ অধিদপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।

ঢাকার কামরাঙ্গিচর এলাকায় অভিযানকালে একটি কারখানার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

সুপারশপে পাটের ব্যাগ

নিষেধাজ্ঞার এক মাস পর রাজধানীর সুপারশপগুলোর চিত্র পাল্টেছে অনেকটা। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাড়ছে সেখানে। মাছ-মাংস দেওয়া হচ্ছে মোটা কাগজের ঠোঙায়। তবে কাঁচা সবজি বা খোলা পণ্যের ক্ষেত্রে আগের মতই পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে দেখা গেছে।

সুপারশপ স্বপ্নের ধানমন্ডির বিক্রয়কেন্দ্র থেকে অল্প কিছু পণ্য কেনাকাটার পর ২০ টাকা দিয়ে একটি পাটের ব্যাগ কিনতে দেখা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আল আমিনকে। বললেন, পাটের ব্যাগ বিক্রির উদ্যোগটা ভালো। তবে অল্প পণ্যের জন্য অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হল।

এজন্য পলিথিনের বিকল্প হিসেবে যা আনা হবে বা হচ্ছে সেটার দাম কমানো গেলে মানুষ খুব সহজে গ্রহণ করবে বলে মনে করেন তিনি।

সেখান থেকে মাংস কিনেছেন মাসুদুর রহমান। তাকে কাগজের যে ব্যাগে মাংস দেওয়া হয়েছে সেটি ভিজে গেছে। ফোট ফোটা পানিও পড়ছিল।

এতে বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি বললেন, ”এখন যেখানেই যাব এটা থেকে পানি পড়বে। যেসব পণ্য এটার সঙ্গে লাগবে সেগুলোও গন্ধ হবে। আসলে পলিথিনের একটা যৌক্তিক বিকল্প দরকার।“

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 bornomalanews24.com
themesba-lates1749691102