অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ২০২২ সালের শুরুর দিকে শ্রীলঙ্কায় তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে ওই বছরের মে মাসে হাজার হাজার মানুষ সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপাকসের বাসভবনে ঢুকে পড়ে। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন গোতাবায়া। ক্ষমতায় বসেন রনিল বিক্রমাসিংহে।
এরপর দুই বছরেরও কিছু বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক মন্দা অনেকটাই সামলে নিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে শ্রীলঙ্কার জনগণ নতুন নেতা বাছাই করার সুযোগ পাচ্ছেন।
অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা এবং কয়েক মাসের খাদ্য, জ্বালানী ও ওষুধের ঘাটতির অবসান ঘটানোর কৃতিত্বের দাবিদার বিক্রমাসিংহে নির্বাচনের মধ্যদিয়ে নতুন করে ম্যান্ডেট চাইছেন।
বিক্রমাসিংহে ২০২২ সালের সরকারের খেলাপি হওয়ার পর চীনসহ দ্বিপাক্ষিক ঋণদাতাদের সাথে শ্রীলঙ্কার ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ পুনর্গঠনে সাফল্যের জন্য আলোচনায় রয়েছেন।
কিন্তু তার কর বৃদ্ধি ও উদার ইউটিলিটি ভর্তুকি প্রত্যাহার করে সরকারের হিসেবের ভারসাম্য বজায় রাখার নীতি জনগণের কাছে চরমভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারে বিক্রমাসিংহে বলছেন, সেই সময়ের কথা ভাবুন যখন সমস্ত আশা হারিয়ে গিয়েছিল। আমাদের কাছে খাবার, গ্যাস, ওষুধ ছিল না। কোন প্রকার আশা ছিল না। এখন আপনার কাছে একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ এসেছে। আপনারা সন্ত্রাসের সময়ে ফিরে যেতে চান নাকি অগ্রগতিতে যেতে চান।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন যে, ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণের অর্থ পরিশোধের পাশাপাশি ২০২২ সালের সরকারি খেলাপি হওয়ার পর শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি এখনও দুর্বল। তবে বিক্রমাসিংহে বলেছেন, তিনি নির্বাচিত হলে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাবেন।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ চলতি সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে বলেছে, বিক্রমাসিংহের সরকার কীভাবে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করেছে এবং পরবর্তী পরিমিত পুনরুদ্ধার করেছেন- এই নির্বাচনে মূলত তা নিয়ে একটি গণভোট হবে।
এতে আরও বলা হয়, ভর্তূকি প্রত্যাহার এবং জনসাধারণের কাছে অন্যায্য হিসেবে বিবেচিত বিভিন্ন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করায় অনেক নাগরিক একই সময়ে প্রচুর কষ্ট ভোগ করছেন।
বিক্রমাসিংহে অনুরা কুমারা দিসানায়েকে ও সাজিথ প্রেমাদাসাসহ কয়েকজন শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হবেন। এক সময়ের প্রান্তিক মার্কসবাদী দলনেতা ছিলেন দিসানায়েকে। অতীতের সহিংসতার রাজনীতির কারণে তিনি নিন্দিত।
তার দল ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) ১৯৭০ ও ১৯৮০ এর দশকে দুটি ব্যর্থ অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয়। যার ফলে ৮০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়।
গত সংসদ নির্বাচনে দলটি চার শতাংশেরও কম ভোট পায়। কিন্তু শ্রীলঙ্কার সংকট দিসানায়েকের জন্য একটি সুযোগ হিসেবে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সমর্থনের ঢেউ দেখছেন তিনি।
বিক্রমাসিংহের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী নেতা সজিথ প্রেমাদাসা। তিনি দেশটিতে কয়েক দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধ চলাকালে ১৯৯৩ সালে নিহত সাবেক প্রেসিডেন্ট রানাসিংহ প্রেমাদাসার ছেলে।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন নামাল রাজাপাকসে ও নুয়ান বোপেজ আরও দুই রাজনীতিক। প্রভাবশালী রাজাপাকসে পরিবারের বংশধর নামাল রাজাপাকসে। তার বাবা মাহিন্দা ও চাচা গোতাবায়া, তিনি আরেক চাচা বাসিলের প্রতিষ্ঠিত শ্রীলঙ্কা পোদুজানা পেরামুনার (এসএলপিপি) প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
পিপলস স্ট্রাগল অ্যালায়েন্সের প্রার্থী বোপেজ দুই বছর আগে গোতাবায়া রাজাপাকসেকে ক্ষমতাচ্যুত করা ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানের একাংশকে কাজে লাগানোর আশা করছেন।