প্রথম তিন ওভারে বাউন্ডারি হলো ৭টি, সেখানে পরের ১৩ ওভারে কেবল ৪টি, আর শেষ চার ওভারে ৫টি। এই পরিসংখ্যানেই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের চিত্র পরিষ্কার। শুরু আর শেষটা ভালো হলেও মাঝে রান হলো না খুব একটা। প্রথম সাত ব্যাটারের সবাই দুই অঙ্কে গেলেও ত্রিশ পর্যন্ত যেতে পারলেন না কেউই। তবে সর্বোচ্চ ইনিংস খেলে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেওয়ার পর বল হাতেও আলো ছড়ালেন স্বর্ণা আক্তার। জয়ের আনন্দে উইমেন’স টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সারল বাংলাদেশ।
মূল লড়াই শুরুর আগে আত্মবিশ্বাসের রসদ পেল বাংলাদেশ। প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরে গেলেও দ্বিতীয়টিতে তারা জয়ের দেখা পেল পাকিস্তানের বিপক্ষে।
দুবাইয়ে আইসিসি একাডেমির ২ নম্বর মাঠে সোমবার নিগার সুলতানাদের জয় ২৩ রানে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৩ রানে হারের দিনে বাংলাদেশ করেছিল ১১০ রান। সেই তুলনায় এবার কিছুটা উন্নতি হয় ব্যাটিংয়ে। ৭ উইকেটে ১৪০ রান করে তারা। এই পুঁজি নিয়ে তারা আট বল বাকি থাকতে পাকিস্তানকে গুটিয়ে দেয় ১১৭ রানে।
ব্যাটিংয়ে ১৭ বলে ৩ চারে অপরাজিত ২৮ রানের পর ১৬ রানে ২ উইকেট নেন লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার স্বর্ণা। দুটি করে শিকার ধরেন পেসার মারুফা আক্তার, লেগ স্পিনার ফাহিমা খাতুন ও রাবেয়া খানও।
বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামে টস জিতে। প্রথম ওভারে ফাতিমা সানাকে দুটি চার মারেন সাথি রানি। পরের ওভারে দিয়ানা বেইগকে পরপর দুটি চার মারেন তিনি, দিলারা আক্তার একটি। তৃতীয় ওভারে দুই ওপেনারের ব্যাট থেকে বাউন্ডারি আসে আরও একটি করে।
প্রথম তিন ওভারে বাংলাদেশ তুলে ফেলে ৩৩ রান।
চতুর্থ ওভারে সাদিয়া ইকবালের বলে বোল্ড হন দিলারা (৮ বলে ১০)। পঞ্চম ওভারে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় সাথির ৫ চারে ১৬ বলে ২৩ রানের ইনিংস।
দ্রুত দুই ওপেনারের বিদায়ের পর রানের গতিতে দম দিতে পারেননি কেউ। তিনে নেমে ২৪ বলে ১৫ রান করে ফেরেন সোবহানা মোস্তারি। চারে অধিনায়ক নিগার ২২ বলে করেন ১৮। ২০ বলে ১৭ রান করে রান আউট হন তাজ নেহার।
রিতু মনির ৮ বলে ১৪ ও স্বর্ণার ১৭ বলে ২৮ রানের সুবাদে ১৪০ পর্যন্ত যেতে পারে বাংলাদেশ।
বোলিংয়ে দ্বিতীয় ওভারে মুনিবা আলিকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন বাঁহাতি স্পিনার নাহিদা। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ফাহিমার শিকার সিদরা আমিন। অষ্টম ওভারে আক্রমণে এসে প্রথম বলেই গুল ফিরোজাকে ফিরতি ক্যাচে বিদায় করেন স্বর্ণা।
প্রথম ১০ ওভারে পাকিস্তান ৩ উইকেটে করে ৫৭ রান।
দ্বাদশ ওভারে ফাহিমা সরাসরি থ্রোয়ে রান নাউট করেন নিদা দারকে। পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে তিনি বোল্ড করেন ইরাম জাভেদকে। ৬৫ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান।
স্বর্ণা নিজের তৃতীয় ওভারে দুটি বাউন্ডারি হজম করলেও ফিরিয়ে দেন আলিয়া রিয়াজকে। ওমাইমা সোহেল ও ফাতিমা সানা চেষ্টা করেন রান বাড়াতে। অষ্টাদশ ওভারে তিন বলের মধ্যে এই দুজনকেই ফেরান রাবেয়া। পরের ওভারে দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচ শেষ করে দেন মারুফা।
ওমাইমা সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেন ৩৩ বল খেলে।
আগামী বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান। ‘বি’ গ্রুপে নিগারদের বাকি তিন প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাঁচ আসর খেলে ২১ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় কেবল দুটি। ২০১৪ আসরে ওই দুটি জয়ের পর সবশেষ টানা ১৬ ম্যাচে সেই স্বাদ আর মেলেনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪০/৭ (সাথি ২৩, দিলারা ১০, সোবহানা ১৫, নিগার ১৮, তাজ ১৭, স্বর্ণা ২৮*, রিতু ১৪, ফাহিমা ২, রাবেয়া ৫*; ফাতিমা ৩-০-২৯-০, দিয়ানা ২-০-২৫-১, সাদিয়া ৪-১-১৯-২, নিদা ৩-০-১৫-১, নাশরা ২-০-৬-০, তুবা ৩-০-১৭-১, ওমাইমা ২-০-১২-১, আলিয়া ১-০-১৩-০)
পাকিস্তান: ১৮.৪ ওভারে ১১৭ (মুনিবা ১১, ফিরোজা ১৭, সিদরা ১০, নিদা ১৪, ওমাইমা ৩৩, ইরাম ০, আলিয়া ১০, ফাতিমা ১৭, সাদাফ ১, তুবা ১*, আরুব ১; মারুফা ৩.৪-০-১৫-২, নাহিদা ৪-০-২৩-১, ফাহিমা ৪-০-৩২-২, রাবেয়া ৪-০-২৯-২, স্বর্ণা ৩-০-১৬-২)
ফল: বাংলাদেশ ২৩ রানে জয়ী