প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির বক্তব্য সম্পর্কে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের কথাই সরকারের বক্তব্য জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেছেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) এক ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এদিকে, বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক গণজমায়েতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এ সপ্তাহের মধ্যেই রাষ্ট্রপতিকে পদচ্যুত করার দাবি জানান।
এছাড়া রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছেন ছাত্র-জনতা। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের দাবিতে বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে শাহবাগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে ইনকিলাব মঞ্চ, ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র-জনতা মঞ্চ ও ৩৬ জুলাই মঞ্চ ব্যানারে একদল ছাত্র-জনতা বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মানবজমিনের প্রকাশনা জনতার চোখের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে- নেপথ্যের গল্পতে প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী জানান, রাষ্ট্রপতি তাকে জানিয়েছেন, তিনি শুনেছেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। কথোপকথনটি একটি রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’- এ প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে গত সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দাবি করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মিথ্যাচার করেছেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, গত ৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেছিলেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি সেটা গ্রহণ করেছেন। এখন আড়াই মাস পর বলছেন, তাঁর কাছে শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নেই। এমন কথা বলা স্ববিরোধিতা। তিনি মিথ্যাচার করেছেন, যা শপথ ভঙ্গের শামিল। তার বক্তব্যে অটল থাকলে তিনি পদে থাকতে পারেন কিনা তা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচিত হতে পারে।
এদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র নিয়ে সমালোচনার পর অবশ্য বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়। রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে গত সোমবার বঙ্গভবনের পাঠানো এক ব্যাখ্যায় বলা হয়, ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও দেশত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার উপর যত ধরনের প্রশ্ন জনমনে উদ্রেক হয়েছে সেগুলোর যাবতীয় উত্তর স্পেশাল রেফারেন্স নং-০১/২০২৪ এ মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গত ৮ আগস্টের আদেশে প্রতিফলিত হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎকার নেওয়া মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীও বলছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অসত্য কথা বলেননি।
গত সোমবার রাতে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকে তিনি বলেন, আসল ঘটনাটা কি সেটা জানার চেষ্টা করেছি আমি, অনেকদিন। তারপর প্রেসিডেন্ট (রাষ্ট্রপতি) সাহেবের সাথে কথা বলেছি। প্রেসিডেন্ট সাহেব যা সত্য তাই বলেছেন। এখানে ষড়যন্ত্রেরও কিছু নেই আর প্রেসিডেন্ট অসত্য কথা বলেছেন বলেও তো আমার মনে হয় না। তিনি তো পরিষ্কার বলেছেন, বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে। ওই রিপোর্টেও কিন্তু তিনি নিজেই বলেছেন যে, এটা মীমাংসা হয়ে গেছে। সেটাও ছাপা হয়েছে।
পদত্যাগপত্রের ইস্যু অন্তর্বর্তী সরকারই মীমাংসা করতে পারে জানিয়ে মতিউর রহমান বলেন, যারা সরকারে আছেন তারাই তো এটার মীমাংসা করতে পারেন। তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) কাছে যদি দালিলিক প্রমাণ থাকে, তাহলে তারা সেটা সামনে আনতে পারেন। আমার ফাইন্ডিংস হচ্ছে দালিলিক কোনো প্রমাণ নেই। মহামান্য রাষ্ট্রপতি এটা আমাকে বলেছেন, তার কাছে যায়নি (পদত্যাগপত্র)। কিন্তু উনি তো এটা বলেন নি যে পদত্যাগ অবৈধ, এটা ঠিক না। বঙ্গভবন থেকে যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে মীমাংসিত ইস্যু নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। উনি যথার্থই বলেছেন।