“আমরা মনে করি যে, যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারা জনগণের আকাঙ্ক্ষার পক্ষেই থাকবেন”, বলেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারে নতুন দুই সদস্যকে নিয়ে জনগণের মধ্যে কোনো ‘অনাগ্রহ’ থাকলে সেটি ‘খতিয়ে দেখার’ কথা বলেছেন উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম।
বুধবার বিকেলে টাঙ্গাইলে ‘মওলানা ভাসানী ও নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ বলেন তিনি।
প্রয়াত নেতার ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে মাহফুজ ছাড়াও অংশ নেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
মাহফুজ বলেন, “জনগণই নতুন উপদেষ্টাদের বিচার করবে তাদের কার্যক্রম দেখে। কিন্তু জনগণের যদি কোনো অনাগ্রহ থাকে আমরা সেটি খতিয়ে দেখব।
“তবে আমরা মনে করি যে, যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারা জনগণের আকাঙ্ক্ষার পক্ষেই থাকবেন। তারপরও যদি জনগণের কোনো অসন্তোষ বা অসংকোচ থাকে, তাহলে তাদের কাজের মাধ্যমেই প্রমাণ হবে।”
গত রোববার নতুন তিন উপদেষ্টা হিসেবে মাহফুজ ছাড়াও যোগ দেন ব্যবসায়ী শেখ বশির উদ্দিন, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
বশির উদ্দিন যশোরে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ আফিলউদ্দিনের সৎ ভাই। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার সময় ফারুকীর ফেইসবুক পোস্টগুলো এখন ভাইরাল হচ্ছে নতুন করে, সেগুলোতে তিনি সে সময় সরকারের পক্ষে কথা বলেছেন।
ফারুকীর শপথের দিনেই বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভে তাকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ বলা হয়েছে। চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলামী এই দুইজনকে বাদ দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
বশিরউদ্দিন জানিয়েছেন, তিনি ও আফিল উদ্দিন সৎ ভাই, তাদের ব্যবসা এবং রাজনৈতিক চিন্তাও আলাদা ছিল সব সময়। ফারুকী দাবি করেছেন, তিনি ২০১২ সাল থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের পতন চাইতেন এবং আমেরিকান ক্লাবে গিয়ে এ নিয়ে গোপনে আলোচনাও করতেন।
মাহফুজ বলেন, “আমরা চেষ্টা করেছি যারা দীর্ঘ লড়াইয়ে আমাদের সাথে এবং পক্ষে ছিলেন তাদের নিয়ে সরকার গঠন করতে। আমাদের কাছে অনেকগুলো বাস্তবতা ছিল, যার বেশির ভাগই আমরা পূরণ করতে পেরেছি।”
নিজেদেরকে ‘গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে মনোনীত’ সরকার দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছি। জনগণের পক্ষে এবং দীর্ঘ লড়াইয়ের পক্ষে আছেন তাদের নিয়েই আমরা সরকার গঠনের পরিকল্পনা করেছিলাম এবং সেইভাবেই সরকার পরিচালিত হচ্ছে।”
সরকারি কর্মীদের জনগণের সঙ্গে দূরত্ব কমাতে হবে
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, “আমলাতন্ত্রটা জনগণের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলত। আমরা মনে করি, তারা জনগণের সেবক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, সেই সেবাটা যেন জনগণ দেন। প্রভুত্বমূলক জায়গায় না থেকে জনগণের সাথে দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে।
“আমরা কাজ করছি যাতে কেউ বলতে না পারে কোনো সরকারি কর্মকর্তাদের পাওয়া যায় না। আমরা কর্মকর্তাদের আরও বেশি জনসম্পৃক্ত হতে বলেছি।”
প্রশাসনের প্রত্যেকটি মানুষের মননে মগজে ‘ফ্যাসিবাদী চিন্তা’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, “সেটা একদিনে কিংবা আমি মনে করি ১০ বছরেও উপড়ে ফেলা সম্ভব নয়। পুরো একটা প্রজন্মকে সেই ‘ফ্যাসিবাদী’ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে উঠে আসতে হবে, দাঁড়াতে হবে। আমাদের প্রজন্ম যতক্ষণ না প্রশাসনের প্রত্যেকটা জায়গায় নতুন করে দায়িত্ব না নেবে, ততদিন পর্যন্ত এই ‘ফ্যাসিবাদী’ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিলোপ হবে বলে মনে হচ্ছে না।”
সরকার পতন আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট মিছিলে গুলিতে নিহত স্কুল ছাত্র মারুফের নামে টাঙ্গাইলে একটি স্টেডিয়াম করার ঘোষণাও দেন ক্রীড়া উপদেষ্টা।
কবি ও লেখক ফরহাদ মজহারের সভাপতিত্বে সভায় মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেলও বক্তব্য রাখেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটি টাঙ্গাইল শাখার কামরুজ্জামান শাওন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত মারুফের মা মোর্শেদা বেগম, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সংগঠক ফাতেমা রহমান বিথি, আবু আহমেদ শেরশাহও ছিলেন বক্তার কাতারে।
আয়োজনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভাসানী পরিষদের সদস্য সচিব আজাদ খান ভাসানী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মওলানা ভাসানী পাঠ চক্রের সদস্য সচিব মাসুদুর রহমান রাসেল।