ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন নির্মাতা অনন্ত হীরা। ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের পরে একই পদে থাকলেও পরে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তী সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক কমিটি। সেই কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দ শাকিল ও ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি অনন্ত হীরা দুই কমিটির পক্ষ থেকে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার জানিয়েছিলেন। এই নিয়ে একাধিকবার বসেন তারা।
সর্বশেষ মঙ্গলবার মিটিংয়ে তারা যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছিলেন। আনুষ্ঠানিক সেই বিবৃতি বুধবার (১৩ নভেম্বর) প্রকাশের দুই ঘণ্টা পরে সভাপতি আরেক চিঠিতে জানালেন অসুস্থ হয়ে পদত্যাগ করছেন।
ডিরেক্টরস গিল্ডের একাধিক পরিচালক জানান, সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুটি কমিটি মিলে তারা একসঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করছিলেন। তবে আগের নির্বাচিত কমিটি ও ৫ আগস্টের পর সংস্কার কমিটির মধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে বোঝাপড়া চলছিল। সর্বশেষ মঙ্গলবার মিটিং করে যৌথ বিবৃতি দেন দুই কমিটির প্রধান। সেই বিবৃতি অনন্ত হীরা নিজেই নাট্য পরিচালকদের ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেছিলেন।
অনন্ত হীরা ও সৈয়দ শাকিলের সেই যৌথ বিবৃতিতে লেখা ছিল, ‘ডিরেক্টরস গিল্ড বাংলাদেশের সংস্কার কার্যক্রম চলমান। উক্ত সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করাটা যেমন সংস্কার কমিটির দায়িত্ব, তেমনি সংস্কার কমিটিকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানে কার্যনির্বাহী পরিষদ দায়বদ্ধ। একসঙ্গে কাজ করতে গেলে ভুলত্রুটি বা ভুল-বোঝাবুঝি হতে পারে, যা দ্রুত নিরসন করা উত্তম। সংগঠনের কল্যাণে যেকোনো কার্যক্রমে আমরা আপনাদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যাব। আসুন, আমরা ইতিবাচক থাকি, একতাবদ্ধ থাকি। ধন্যবাদ।’
তার দুই ঘণ্টা পরেই সভাপতির পদত্যাগ করার চিঠি দেখে অবাক হয়েছেন সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক। কেন তিনি পদত্যাগ করেছেন, এ বিষয়ে কিছুই জানেন না এই আহ্বায়ক। বৃহস্পতিবার সৈয়দ শাকিল বলেন, ‘পদত্যাগের ঘটনাটা আমাদের অবাক করেছে। একটি সংগঠনের অচলাবস্থা সহসাই কাটবে না। তারপরও আমরা বসে সমস্যাগুলো কমানোর চেষ্টা করছি। আমরা চাই পেশাজীবী এই সংগঠনে সংস্কারকাজগুলো এগিয়ে নিতে। সেভাবেই আলোচনা এগোচ্ছিল। এর মধ্যে হীরা ভাইয়ের পদত্যাগের কথা দেখলাম। এটা আমাদের অবাক করেছে।’ তিনি জানালেন, আজ চারটার পরে জরুরি মিটিং করবেন। সেখানেই নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন।
কেন ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করলেন, জানতে চেয়ে একাধিকবার ফোন করা হলেও অনন্ত হীরার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। অনন্ত হীরা নির্বাহী পরিষদ ও সাধারণ পরিষদ সদস্যদের উদ্দেশে তার পদত্যাগের চিঠিতে লিখেছেন, ‘ডিরেক্টরস গিল্ড বাংলাদেশের একজন গর্বিত প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বিগত ২০২৩ সালের ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আপনারা আস্থা রেখে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করায় আমি আমৃত্যু আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। শপথ গ্রহণের পর থেকে সংবিধানের প্রতি শতভাগ বিশ্বস্ত থেকে শ্রম ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি এবং আপনাদের প্রণীত সংবিধান মোতাবেক নির্ধারিত মেয়াদকালের শেষ দিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের শতভাগ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মানুষ তো আর তার জন্য নির্ধারিত নিয়তি বদলাতে পারে না।’
এই সময়ে তিনি সেই চিঠিতে আরও লিখেছেন, ‘তাই আমি আমার শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করবার মতো অপ্রিয় সিদ্ধান্তটি নিতে বাধ্য হয়েছি। সম্মানিত সদস্য, আপনারা আমার পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করে আমাকে আরও একবার আপনাদের কাছে আমৃত্যু ঋণী থাকবার সুযোগ দেবেন, এটাই আপনাদের কাছে আমার একান্ত নিবেদন। ডিরেক্টরস গিল্ড বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সংস্কার কমিটি সফল হোক। ডিরেক্টরস গিল্ড বাংলাদেশ সম্মান নিয়ে শিরদাঁড়া উঁচিয়ে এগিয়ে যাক এই প্রত্যাশায়।’
ডিরেক্টরস গিল্ডের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পদত্যাগ করার বিষয়ে আমরা আগে থেকে কিছুই জানতাম না। একদিন আগেও আমাদের কথা হয়েছে। সেখানে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে দিকনির্দেশনামূলক কথা হয়। যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। এখন হঠাৎ করেই কেন যে পদত্যাগের প্রশ্ন আসল, এই প্রসঙ্গে কিছু বলতে পারছি না। বরং ঘটনা আমাদের অবাক করেছে।’
তবে ডিরেক্টরস গিল্ডের সাবেক এক নেতা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘এক সংগঠনের নির্বাচিত ও পরে সংস্কার কমিটি করা হলে শুরু থেকেই দুই কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বই চলছিল। কে কার ওপর প্রভাব খাটাবে, এই প্রশ্ন আসছিল। সিংক হচ্ছিল না। নির্বাচিতরা সংস্কার কমিটিকে মানতে পারছিলেন না। অন্যদিকে সংস্কার কমিটি কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে কাজ করতে চাইলেও সমস্যা পড়ত। কার্যনির্বাহী কমিটি মনে করত, সংস্কার কমিটির দরকারই নেই। এই নিয়ে দ্বন্দ্ব বেড়েই চলছিল। বর্তমান দ্বন্দ্বে সংগঠনটি ধ্বংসের জায়গায় চলে গেছে।’
এফটিপিও’র চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ বলেন, ‘এভাবে সভাপতি পদত্যাগ করায় সংগঠনটি আরও বিপদে পড়ে গেল। একই সঙ্গে সংগঠনের দুটি কমিটি থাকায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে নিজেদের মধ্যে বসে সমস্যার সমাধান করা উচিত ছিল।’