রিপোর্ট: বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও বিনোদন জগতের অনেক পরিচিত মুখের পেছনে লুকিয়ে রয়েছে দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের সাহসী ভূমিকা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়াই করে যারা বিজয়ের পথে অবদান রেখেছিলেন, যুদ্ধের পর তারা ফিরে এসেছিলেন সংস্কৃতির ময়দানে। তাঁদের হাত ধরেই গড়ে উঠেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও নাট্যাঙ্গনের শক্ত ভিত। কামরুল আলম খান খসরু ছিলেন ঢাকা অঞ্চলের গেরিলা বাহিনীর অধিনায়ক। তিনি সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও সক্রিয় ছিলেন এবং ‘ওরা ১১ জন’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। পরিচিত নায়ক ফারুক (আকবর হোসেন পাঠান দুলু) ছিলেন পুরান ঢাকার আলোচিত এক তরুণ, যিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতার বছরেই ‘জলছবি’ চলচ্চিত্র দিয়ে তিনি ঢালিউডে পা রাখেন, যা পরবর্তীতে গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। মাসুদ পারভেজ বা সোহেল রানা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতার পর ‘ওরা ১১ জন’ চলচ্চিত্রের প্রযোজক। ১৯৭৩ সালে ‘মাসুদ রানা’ সিনেমার মাধ্যমে তিনি নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ঢালিউডের স্টাইলিশ নায়ক জাফর ইকবালও মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি অংশগ্রহণকারী। ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে তিনি নিয়মিত অভিনয়ে যুক্ত হয়ে আশির দশকে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। অ্যাকশন ছবির পথিকৃৎ জসীম কলেজ ছাত্র থাকাকালীন সেক্টর দুইয়ের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং ১৯৭২ সালে ‘দেবর’ চলচ্চিত্র দিয়ে অভিনয় শুরু করেন। হুমায়ূন ফরীদি পড়াশোনা ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। স্বাধীনতার পর তিনি মঞ্চ, নাটক, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন। বাকের ভাইখ্যাত আসাদুজ্জামান নূর সেক্টর ছয়ের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ১৯৭৪ সালে টেলিভিশনে যাত্রা শুরু করেন এবং থিয়েটারের মাধ্যমে স্বাধীনতার আগে থেকেই অভিনয়ে যুক্ত ছিলেন। ঢাকার উত্তর বাহিনীর গেরিলা যোদ্ধা রাইসুল ইসলাম আসাদ যুদ্ধের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অভিনয়ে গভীরতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা এনে দেন। এছাড়াও পপগুরু আজম খান, নির্মাতা নাসিরউদ্দিন ইউসূফ বাচ্চুসহ আরও অনেকে মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজি রেখে সম্মুখ সমরে লড়াই করেছেন। তাঁদের সাহস ও ত্যাগের কারণে আজ বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী। এই মহান মুক্তিযোদ্ধারা শুধু বীরত্বের প্রতীকই নয়, বরং দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে স্মরণীয়।