গত অক্টোবরের শেষের দিকে বিমান হামলার সময় ইসরায়েল ইরানের পারচিন সামরিক কমপ্লেক্সে আঘাত করেছে বলে ক্সিওস পোর্টালকে জানিয়েছেন দুই ইসরায়েলি কর্মকর্তা। তারা বলেছেন, এই হামলায় ত্যাধুনিক সরঞ্জাম ধ্বংস হওয়ায় ইরানের পক্ষে পারমাণবিক বিস্ফোরক ডিভাইস তৈরি করা আরও কঠিন হয়ে যাবে।
তারা বলছেন, ধ্বংস করা অত্যাধুনিক সরঞ্জামগুলো মূলত পারমাণবিক ডিভাইসে ইউরেনিয়ামকে ঘিরে প্লাস্টিকের বিস্ফোরক একটি ডিজাইন। এটি পারমাণবিক বিস্ফোরণ পরীক্ষা করার জন্য প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা অ্যাক্সিওসকে বলেছেন, ইরান গত বছর স্পর্শকাতর পরমাণু গবেষণা পুনরায় শুরু করেছে, কিন্তু সত্যিকারের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পদক্ষেপ নেয়নি।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছেন, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় তবে ধ্বংস হওয়া সরঞ্জামগুলি প্রতিস্থাপন করতে হবে। ইরান যদি এটি সংগ্রহের চেষ্টা করে তবে তারা এটি’ ট্র্যাক’ করতে সক্ষম হবে।
বিটুইন দ্য লাইনস
ইসরাইলি কর্মকর্তারা গোয়েন্দা চিত্র যেভাবে বোঝেন সেভাবেই বর্ণনা করছেন। যদিও ইরানের পরমাণু পরিকল্পনা ও সক্ষমতা সম্পর্কে নিখুঁতভাবে জানা সম্ভব নয়।
ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটির মতে, পারচিন সামরিক কমপ্লেক্সের ‘তালেঘান-২’ স্থাপনাটি ২০০৩ সালের আগে পারমাণবিক ডিভাইস বিস্ফোরণের জন্য প্রয়োজনীয় বিস্ফোরক পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরানের বন্ধ হয়ে যাওয়া সামরিক পরমাণু কর্মসূচি নতুন করে শুরুর অংশ হিসেবে এসব সরঞ্জাম তৈরি করা হয়েছে। অন্তত দুই দশক ধরে এসব স্থাপনায় মজুদ করে রাখা হয়েছে।
মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা অ্যাক্সিওসকে আরও বলেছেন, ইরান গত বছর গবেষণা পুনরায় শুরু করেছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র বিকাশের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে বেসামরিক উদ্দেশ্যে গবেষণা হতে পারে, যা ন্যায়সঙ্গত।
এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, তারা (ইরান) বৈজ্ঞানিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ভিত্তি স্থাপন করতে পারে। এটা একটা ‘টপ সিক্রেট’ ব্যাপার ছিল। ইরান সরকারের একটি ক্ষুদ্র অংশ বিষয়টি জানলেও অধিকাংশই তা জানত না। ‘তালেঘান-২’ স্থাপনার যন্ত্রপাতি গবেষণায় ব্যবহার করা হয়নি, তবে ইরান পারমাণবিক বোমার দিকে অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে পরবর্তী পর্যায়ে এটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারত।
তিনি বলেন, ইরান যদি পরমাণু বোমার দিকে অগ্রসর হতে চায়, তাহলে ভবিষ্যতে এই সরঞ্জামের প্রয়োজন হবে। এখন তাদের কাছে তা আর নেই। তাদের অন্য একটি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
পর্দার আড়ালে
ইসরায়েল যখন ১ অক্টোবর ইরানের বিশাল ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন ‘তালেঘান-২’ স্থাপনাটিকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা না চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু ‘তালেঘান ২’ ইরানের ঘোষিত পরমাণু কর্মসূচির অংশ ছিল না। এ কারণেই ইরানিরা পারমাণবিক বিস্তার রোধ চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে স্বীকার করছে না।