ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৪ বছর পর ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা বর্তমানে ছাত্রসমাজে চুলচেরা বিশ্লেষণ ও আলোচনা সৃষ্টি করেছে। ২০১৯ সালে সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ২০২০ সালের মার্চে তার মেয়াদ শেষ হয়, এরপর থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আবারও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবী উঠেছে, যা বর্তমানে গুরুত্ব সহকারে বিবেচিত হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ জানিয়ে দিয়েছেন, ডাকসু নির্বাচন জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে পারে। নির্বাচনের ব্যাপারে অধ্যাপক মতিন উদ্দীনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা ইতোমধ্যেই কয়েকবার সভা করেছে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের মতামত প্রকাশ করার কথা। তার ভাষায়, এ মাসের মধ্যে পরামর্শ পাওয়ার পর সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় নির্বাচনের দ্রুত আয়োজনের প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, খুব তাড়াতাড়ি বা খুব দেরিতে নির্বাচন হলে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। তিনি একটি স্পষ্ট রোডম্যাপের দাবি জানিয়েছেন, যা ছাত্রদের মধ্যে ইতিবাচক এবং উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদারও ডাকসু নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ছাত্র সমাজের বৈধ প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ডাকসু নির্বাচন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বৈধ প্রতিনিধি নির্বাচন হওয়া উচিত, এবং সেটি ডাকসু দিয়েই হতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান শুভ বলেন, বিগত বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করেছে, কারণ এতে প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতা কমে যাবে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি পাবে। তিনি নির্বাচনের জন্য দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েমও ডাকসু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন এবং সুষ্ঠু রাজনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবি জানিয়েছেন। তার মতে, এটি শিক্ষার্থীদের মতামত ও আলোচনা ভিত্তিক হওয়া উচিত।
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি জোরালো হয়েছে, এবং ছাত্র রাজনীতির সংস্কার প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ডাকসু নির্বাচন ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সহাবস্থান প্রতিষ্ঠা করবে এবং ছাত্র রাজনীতি পুনর্গঠনে সাহায্য করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচন করার ঘোষণা দেওয়ার পর, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি আরও জোরালো হয়েছে। ছাত্ররা আশা করছে, নির্বাচনের সময় ও প্রক্রিয়া সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হবে, যাতে ক্যাম্পাসে একটি সুষ্ঠু এবং উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এখন দেখার বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই দাবি কিভাবে মেনে নেয় এবং শিগগিরই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে কি না।