### শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কায় ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ
গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীরা। তাঁরা সতর্ক করেছেন যে, গ্যাসের দাম আবারো বাড়লে শিল্পখাতের ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে বছরে অতিরিক্ত প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে পাঠানো এক চিঠিতে এ উদ্বেগের কথা জানান ব্যবসায়ীরা। এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতারা।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সরকার প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১৫০ শতাংশ বাড়ানোর চিন্তা করছে, যা গ্যাসের মূল্য ৭৫ টাকা প্রতি ঘনমিটারে নিয়ে আসবে। এই মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর হলে এটি দেশের শিল্পায়ন ও অর্থনীতিতে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
আত্মবিশ্বাসী ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের বস্ত্র ও পোশাক খাত পুনরায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। গত পাঁচ বছরে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ডিজেলের দামে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে। এতে করে কারখানার গড় উৎপাদন খরচ প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে।
বর্তমানে গ্যাস সংকটের কারণে শিল্পঘন এলাকায় উৎপাদন কমে যাওয়ার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক আর্থিক লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে। এটি সরবরাহ শৃঙ্খলেও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে এবং সময়মতো কাঁচামাল সরবরাহ ও পণ্য রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।
ব্যবসায়ী নেতারা পূর্বে, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শিল্প খাতে গ্যাসের দাম ১৫০ শতাংশ বেড়ানোর পর নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের আশ্বাস পেয়েছিলেন, কিন্তু সেখান থেকে তারা সুফল পাননি।
তারা বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশের পোশাক খাতে বছরে প্রায় ৬ হাজার ৩০০ কোটি ও বস্ত্র খাতে ১১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এইসব খরচের বোঝা বহন করার সক্ষমতা এই শিল্পের নেই, যা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
এদিকে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তাই, তাঁরা জ্বালানি উপদেষ্টাকে দুটি প্রস্তাব দিয়েছেন: এক, শিল্প খাত ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পরিকল্পনা স্থগিত করা এবং আলোচনা করে একটি প্রতিযোগী ও টেকসই মূল্য নির্ধারণের নীতিমালা প্রণয়ন করা; দুই, শিল্প খাতে বিদ্যমান গ্যাস সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো।
অবশ্যম্ভাবী এই সংকট মোকাবিলার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, “বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার জন্য আমাদের সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন।”